নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ছাত্রত্ব ও সনদপত্র বাতিলসহ ৫ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছেন ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আতাউর রহমানকে এ স্মারকলিপি দেন তারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চিহ্নিত অপরাধীদের স্থায়ী বহিষ্কার ও সনদ বাতিল করতে হবে, গণমাধ্যমের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ হস্তান্তর করতে হবে, গণমাধ্যমে প্রশাসনের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ক্যাম্পাসে কিভাবে অবস্থান করে গণমাধ্যমের কাছে সেটার ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ রিপোর্টের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি খুরশিদুল আলম মুজিব, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জোবায়ের হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সেলিম, আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নোমান, ত্রিশাল বার্তার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সময় টেলিভিশনের ময়মনসিংহ ব্যুরো চিফ সাদিকুর রহমান, মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি মো. সেলিম, ত্রিশাল প্রেস ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম তুহিন, বিজনেস বাংলাদেশের ত্রিশাল প্রতিনিধি নুরুদ্দিন, ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ফোরামের সদস্যসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানবন্ধনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক তৈয়ব শাহনুর বলেন, ‘ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল লেগেই থাকে। এসবকে কেন্দ্র করে তারা অস্ত্রের মহড়াসহ প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গতকালও তাই হয়েছিল। সেখানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় অনেক সাংবাদিকও। এই সাংবাদিকরা যেন তাদের অপকর্ম, তাদের নগ্নরূপ তুলে ধরতে না পারেন তাই তাদের প্রতিহত করতেই এই হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা নানা ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ ইউজ করে বেঁচে যায়। অথচ তারা ছাত্রলীগের কোনোরকম নীতি আদর্শ কখনোই প্রদর্শন করেনি। তারা বারবার বহিস্কৃত, তবু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোরাফেরা করে, হলেও থাকে। প্রশাসন যদি তাদের বিরুদ্ধে এবারও কড়া সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে প্রশাসনের মেরুদণ্ড নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলবে।’
সাংবাদিক মোকছেদুল মোমিন বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অতীতেও নানা ধরণের অপকর্ম করেছে। তাদের নামে দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় বহুবার নিউজ হয়েছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ব্যাপারে নমনীয় আচরণ করে আসছে।
সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান নোমান বলেন, ‘প্রশাসনের উপস্থিতিতে তারা যেধরণের নৃশংসতা দেখিয়েছে, তাতে তাদের ছাত্র কিংবা ছাত্রলীগ, কোনোটিই বলার সুযোগ নেই। তারা সন্ত্রাসী, আর তারা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে সন্ত্রাসী লালন-পালন করে? যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ত্রাসীদের যথোপযুক্ত বিচার না করে, যদি সন্তোষজনক ফলাফল না আসে, তাহলে চরম পরিণতি হবে। ত্রিশাল প্রেসক্লাব, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায় থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা সবাই একযোগে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’
উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের একটি কক্ষে সিট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও মারামারিতে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। এতে আহত হয় একাধিক শিক্ষার্থী। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব। এরপর সমিতির সভাপতি মো. ফাহাদ বিন সাঈদ তাকে উদ্ধার করতে আসলে তাকেও জয় ধ্বনি মঞ্চের সামনে বেধড়ক পেটানো হয়।
জানা যায়, হামলাকারীরা আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারী। হামলা করেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী লুবন মোখলেস, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তুহীন (পূর্বে বহিষ্কৃত), রায়হান, চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন। এসময় তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। আহত দুই সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ