ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাবিতে ধর্ষণকাণ্ডে তৃতীয় দিনেও চলছে আন্দোলন

প্রকাশনার সময়: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৯ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামী আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস৷ এতে তৃতীয় দিনেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে৷

মঙ্গলবার(৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে ধর্ষণ ও নিপীড়ন-মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানানো হয়৷ এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, অছাত্রদের হল থেকে বের করা, ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা অবহেলা করা প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগ এবং যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকুরিচ্যুত করার দাবি জানানো হয়৷

মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, ধর্ষণ, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায় অবৈধ শিক্ষার্থীরা। অবৈধ শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদালয়ে গণরুম তৈরি করে বিকৃত যৌনাচারের দীক্ষা দেয়৷ গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীদের উলঙ্গ করে পর্ন দেখানো হয়। এই গণরুম সংস্কৃতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে একেকজন ধর্ষক মোস্তাফিজ, মানিক হয়ে ওঠে।'

ধর্ষকরা ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের হলেও পার পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

তিনি বলেন,'আজকের আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগরের নয়, এটি সারা বাংলাদেশের আন্দোলন৷ প্রায়ই ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকে, তাই আপনি ক্ষমতাসীন দেখে পার পেয়ে যাবেন তা এখন আর চলবে না৷ আপনাকে শাস্তির কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। এ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা যদি নিরাপদ না রাখতে পারে তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতা৷'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার অ্যাখ্যা দিয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন,'আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে এর প্রেক্ষিতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ তিনি বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান কিন্তু এর কিছুই বাস্তবে ঘটে না৷ আমরা অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি, তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন।'

মানবন্ধনে যৌন নিপীড়কের দায়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিচারের দাবি জানান ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি।

তিনি বলেন, 'প্রায় দেড়বছর পার হয়ে গেছে অথচ মাহমুদর রহমান জনির মতো যৌন নিপীড়কের এখনো বিচার হয়নি৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধর্ষক ও নিপীড়কের বিচার করার কোনো সদিচ্ছা নেই৷ তারা বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে, এটা দেখে শিক্ষার্থীরা কি শিখছে? ধর্ষণ-নিপীড়ন করলে এই ক্যাম্পাসে বিচার হয় না৷ কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তো ঐতিহ্য আছে৷ সকল ধর্ষক-নিপীড়কের বিচার শেষ পর্যন্ত হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন যেন বারবার সে বিষয়টা ভুলে যান৷ বর্তমান ধর্ষক মোস্তাফিজকে পালাতেও প্রক্টর মহাদোয় সহযোগিতা করেছে৷ আমরা চাই সকল নিপীড়কদের বিচার হোক'

'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ' গঠন

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্’ নামে দুই সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা৷ এতে শিক্ষকদের পক্ষ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনকে আহ্বায়ক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মেঘকে সদস্য সচিব করা হয়েছে৷ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ধর্ষণ ও নিপিড়নের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে বলে জানান সংগঠকরা৷

টর্চার সেল ৩১৭ নাম্বার কক্ষ সিলগালা

মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সূত্রে জানা য়ায়, শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এই কক্ষ তার বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষী। কক্ষটি 'টর্চার সেল' হিসেবে পরিচিত৷ মূলত চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের জন্য যে কাউকে এই কক্ষেই আটকে নির্যাতন করা হতো। একে মোস্তাফিজ ও তার সহযোগীরা নিয়মিত ইয়াবা, মদ সেবনের কাজে ব্যবহার করতেন।

মীর মশাররফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন,'কক্ষটি ব্যাপারে আমি শুনেছি। ধর্ষণের ঘটনার পর আমরা কক্ষটি সিলাগালা করে দিয়েছি।'

পলাতক মূল আসামি মামুন

ধর্ষণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে বহিরাগত মামুসুর রশীদ মামুন (৪৫) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক বিভাগের মো. মুরাদ৷ তাদের মধ্যে মামুন এই ধর্ষণ কাণ্ডের মূল হোতা। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামুন নওগাঁর পত্নীতলার হাসির উদ্দিনের ছেলে।

পলাতকদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন,'পলাতক দুইজনের অনুসন্ধানে আমাদের টিম কাজ করছে। খোঁজ পাওয়া মাত্রই আপনাদেরকে জানানো হবে।'

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ