‘চারিদিকে উৎসব পরিপূর্ণ নিয়ন আলোয় আমার এ পৃথিবী ঘিরে আসছে আঁধার কালোয়’ আর্ক ব্যান্ডের হাসানের এই গান আধুনিক জীবনে আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের আঁধারকে, হতাশাকে উদযাপন করে।
সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২৩ সালে সারাদেশে সর্বমোট ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বা হতাশায় জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, পড়াশোনার চাপের সম্মুখীন হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় ১ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
গবেষণা বলছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল, প্রেম, পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক সংকট, যৌন হয়রানি, অপমানবোধকে শিক্ষার্থীরাদের হতাশার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই হতাশাকে উদযাপন করার জন্য এক ব্যতিক্রমীধর্মী উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
হতাশা উৎসবের আইডিয়া কিভাবে আসলো জানতে চাইলে হতাশা উৎসবের আহ্বায়ক খালিদ খান বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান উৎসব পালন করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে কোনো উৎসব না হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করেন, তিনি ও তার সহপাঠীরা সবাই হতাশায় নিমজ্জিত। এরপরেই তিনি ফেসবুকে মজার ছলে ‘হতাশা উৎসব’ নামে একটি ইভেন্ট খুলেন। ইভেন্ট খোলার পর ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় তারা সহপাঠীরা মিলে সিদ্ধান্ত অনুষদের চত্বরে হতাশা উৎসব পালন করবেন। যথাযথভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে যে কেউ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে।
আজকের এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী সবাই কালো পোশাক পরে অংশগ্রহণ করে। পুরো চত্বরটিকে হতাশার বিভিন্ন ইমোজি দিয়ে তারা সাজিয়ে তুলেন। হতাশাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য জীবনানন্দ দাশ, ভ্যানগগ, হিথ লেজার ও চিত্রনায়ক বাপ্পারাজসহ যাদের জীবন হতাশায় নিমজ্জিত ছিল সে সকল ব্যক্তিদেরও ছবি টাঙানো হয় হতাশা উৎসব চত্বরে। কালো ব্লাক বোর্ডে স্টিকি নোট দিয়ে হতাশা ব্যক্ত করার ব্যবস্থাও করা হয়।
হতাশা উদযাপন করতে এসে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় জামান বলছিলেন তারা নানা কারণেই হতাশায় নিমজ্জিত থাকেন। হতাশায় নিমজ্জিত থাকার সবচেয়ে প্রধান কারণ পরীক্ষায় কম সিজিপিএ পাওয়া। তাছাড়াও পড়াশোনার চাপ, ঘনঘন পরীক্ষা তাদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। হতাশাকে তারা ভয় না পেয়ে সেটিকে উদযাপন করতেই এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থীই ঝড়ে পরে যায়, আত্মহননের পথ বেছে নেয়। শিক্ষার্থীরা যাতে সুন্দর শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে পারে তাই হতাশাকে তারা খারাপভাবে না নিয়ে জীবন চলার পথের একটি অংশ হিসেবে এই উৎসবটি উদযাপন করছেন।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা যতোই হতাশায় নিমজ্জিত থাকুক আজকে শপথ বাক্য পাঠের মধ্যে দিয়ে তারা তাদের হতাশাকে দূর করে একটি হতাশামুক্ত জীবন গড়ে তুলবেন।
উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী খালিদ মুহাম্মদ সেজান বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রেম, খারাপ রেজাল্ট, পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক সংকট প্রভৃতি কারণে হতাশায় জর্জরিত হয়ে থাকেন। কোভিড পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। হতাশা থেকেই সাম্প্রতিক সময়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। হতাশা থেকে বেড়িয়ে আশার জন্য নিজেদের যেমন চেষ্টা থাকা প্রয়োজন তেমনি শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। কখনো কখনো শিক্ষকদের আচরণ শিক্ষার্থীদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠলেই শিক্ষার্থীরা হতাশা মুক্ত একটি সুন্দর শিক্ষা জীবন গড়ে তুলতে পারবে।
নয়াশতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ