যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযোগ আমলে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে শহরের চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসব কথা বলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এসময়উপস্থিত ছিলেন যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্যবৃন্দসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই এই ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে আছি। আমরা কোনো অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপ হতে দেব না। এ ছাড়া আমাদের সন্তানের মতো কোনো ছাত্রী অসুবিধায় পড়লে আমরা সবসময় তাদের পক্ষে আছি।
তিনি আরও বলেন, এখন অবধি যেহেতু অভিযুক্ত শিক্ষক আসামি সাব্যস্ত হয়নি৷ তাই আমরা তাকে ধরে নিয়ে এসে শাস্তি দিতে পারবো না। তদন্ত কমিটি হয়েছে, তারাও বসে নেই। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, তদন্ত চলমান কিছু বললে এটাকে বলে সাবজুডিশ। যদি আমরা বলে ফেলি তাহলে হয়তো সে পরবর্তীতে চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। এজন্য আমরা আপাতত কিছু বলবো না। তবে আমাদের তদন্তের কাজ অতিদ্রুত গতিতে চলছে। ভিসি ম্যাম আমাদের থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট নিচ্ছেন। আমরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈঠক শেষ করে রাত নয়টায় আসছি। আবার শুক্রবার বন্ধের দিনেও আমাদের কাজ চলমান।
তিনি আরও বলেন, আমরা অভিযুক্তের সব বিষয়গুলো নিয়ে এমনকি ২০১০ সাল থেকে তার অতীতের বিষয়গুলোও দেখতেছি। আমরা রসায়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করতেছি। ওনার (মাহবুবুল মতিন) বিরুদ্ধে আমরা গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। আশা করি তদন্ত সাপেক্ষে অতি অল্প সময়ের ভিতরে আমরা কোনো একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম উদ্দিন হাছান চৌধুরী আওরঙ্গজেব বলেন, ঘটনার পর দিন থেকেই তদন্তের প্রক্রিয়া খুব ভালোভাব শুরু হয়েছে। বিষয়টা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলেই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তদন্তের কাজ চলমান রেখেছি। একইসাথে বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর। সুতরাং তদন্তের প্রক্রিয়া প্রশ্নের উর্ধ্বে রেখে আগানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে কিছু সময় লাগবে। ছাত্ররা যেন এ বিষয়গুলো একটু বোঝে। আমরা নিশ্চিত করছি যে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বিশ্ববিদ্যালয় করবে না। আমরা একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।
প্রসঙ্গত, ৩১ জানুয়ারি দুপুরে উপাচার্য শিরীণ আখতার বরাবর রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ও তার তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তরে থিসিস করা ছাত্রী যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টা জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও যথাযথ বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এরপর বৃহস্পতিবার বিষয়টি পর্যালোচনায় এনে অভিযুক্ত অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সেলে তুলে গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ