ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

চবিতে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫২

চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন একই বিভাগের ও তারই তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তরের থিসিস করা এক ছাত্রী। অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বিষয়টি পর্যালোচনায় নিয়ে রসায়ন বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সুপারিশের আলোকে অভিযুক্ত অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ও বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ধর্ষণচেষ্টার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এসময়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বোনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি। বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এতে সংহতি জানিয়েছেন। আমাদের বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এ বিষয়ে সময় চেয়েছেন। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। যদি আমরা সুষ্ঠু বিচার না পাই তবে আরও কঠোর অবস্থানে যাব।

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি করেন। একইসাথে আর এমন ঘটনা অন্য কোনো নারী শিক্ষার্থীর সাথে যেন না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে বলা হয়।

অবস্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সজীব ঘোষ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সেলে এই বিষয়টি তোলা হবে। এই সুপ্রিম সেল। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এখানে থাকে। তোমরা আমার সন্তান তুল্য। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর কারও সাথে না ঘটে সেই বিষয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তোমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমরা প্রশাসনকে অবহিত করব।

এ সময় চবি প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, আমরা গতকাল সাড়ে ১১টায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্য অভিযোগটি নির্দিষ্ট কমিটিতে তুলেন। পরে আজ দুপুর আড়াইটায় ওই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটি থেকে শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা না করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমরা আশা করি দ্রুত সময়ে কমিটির সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব।

তিনি আরও বলেন, এগুলো খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এতে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ অন্যায় করলে তাকে সেটার ভার নিতে হবে। উপাচার্য সেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছেন। এটা যৌন নির্যাতন সেলে এটা তোলা হবে। সেলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হয় তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

একইদিন বিকেলে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) সৈয়দ ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত আদেশপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

আদেশপত্রে অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিনকে বলা হয়, রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত রসায়ন বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সুপারিশের আলোকে আপনাকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রসায়ন বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে আদেশক্রমে বিরত রাখা হলো।

এর আগে, গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নিকট যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার জন্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘আমি প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুল মতিনের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তরের থিসিস করছি। থিসিস চলাকালীন আমার সুপারভাইজার (মাহবুবুল মতিন) বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করছেন। থিসিস শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি পরীক্ষাগারে (ল্যাব) ও নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে একাধিকবার জোরপূর্বক আমার হাত চেপে ধরা, শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, অনুপযুক্ত শব্দের ব্যবহার, কেমিকেল আনাসহ বিভিন্ন বাহানায় জাপটে ধরাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন করে আসছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘৬ জানুয়ারি গবেষণাগারে আমাকে একা পেয়ে ওই শিক্ষক যৌন নিপীড়ন করেন। এরপর ১৩ জানুয়ারি নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনা প্রকাশ না করতে তিনি আমাকে ও আমার দুই বান্ধবীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন এবং তার সাথে মধ্যস্থতায় আসার জন্য আমাদেরকে প্রায় ২৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে জোরপূর্বক তার রুমে আটকে রাখেন।

এ অবস্থায় ওই ছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। এরূপ কর্মকাণ্ড তার দৈনন্দিন কাজে প্রভাব ফেলছে এবং গবেষণাগারে থিসিসের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেছেন ওই ছাত্রী। পাশাপশি তিনি এ ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য যথাযথ বিচার দাবি করেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ