শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

নষ্ট হচ্ছে ৬ লাখ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম

প্রকাশনার সময়: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৩ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:১৪

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০৭ জন শিক্ষক, ১৫৭ জন কর্মকর্তা ও ৮৪৫১ জন শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে রয়েছে 'ব্যথার দান' স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তবে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি প্রয়োজনের সিকিভাগও চিকিৎসা চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সাধারণ সেবা ছাড়া মিলছে না কোনো বিশেষ সেবা। ফলে সামান্য থেকে গুরুতর যেকোনো অসুস্থতায় শিক্ষার্থীদের যেতে হচ্ছে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

২০১৭ সালে প্রায় ৬ লাখ টাকার মেডিকেল সরঞ্জাম কেনা হলেও গতানুগতিক সেবার বাইরে মেলেনি বাড়তি সাস্থ্যসেবা। এখনো কাজে আসেনি সরঞ্জামসমূহ। এরমধ্যে অনেক সরঞ্জাম ব্যবহারহীন পরিবেশেই নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। স্টোররুমের বদ্ধ পরিবেশের ধুলাবালি যেন গিলে ফেলছে সরঞ্জামগুলোকে। ৭ বছর ধরে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষাসহ ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও এখনো ছোঁয়া মেলেনি এসব স্বাস্থ্যসেবার। ফলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে বাহিরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা'।

এ ছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত 'ব্যথার দান' স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে জরুরি মূহুর্তে পরিবহন সেবা দিতে রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। যা সবসময় না পাওয়ার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হওয়ায় একই সময়ে একাধিক শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স কল করলে ভীষণ বিপাকে পড়তে হয় অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকেও।

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টারে নিশ্চিত করা যায়নি দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা কিংবা সপ্তাহের ৭ দিনই স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবারের পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস ছুটিতেও বন্ধ থাকে সেবাদান কার্যক্রম। ফলে বিভিন্ন সময় সংকটাপন্ন হতে হচ্ছে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের। রাতে অসুস্থ হলে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় সকাল অবধি। বাকি সময় স্বাস্থ্যসেবা মিললেও প্যারাসিটামল আর ওমিপ্রাজলেই সীমাবদ্ধ ঔষধের যোগান। অনেকে এই মেডিকেল সেন্টারকে প্যারাসিটামল সার্ভিস সেন্টার বলেও অভিহিত করছেন।

'ব্যথার দান’ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম অনিক বলেন, 'ব্যথার দান’ এর স্বাস্থ্যসেবা প্যারাসিটামল ও ওমিপ্রাজলে সীমাবদ্ধ। যেকোনো সমস্যা, অসুস্থতায় এর বাইরে কিছু পেয়েছি বলে মনে হয় না। রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি করার মতো সরঞ্জাম থাকলেও আমরা এখানে কোনো পরীক্ষা করাতে পারি না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। এ যেন থেকেও না থাকা, পেয়েও না পাওয়া।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহে তারা সবসময়েই অবহেলা করে। রাতের বেলা মেডিকেল সেন্টারে সকল চিকিৎসা বন্ধ থাকে। চারটি হলে রোজই বহু শিক্ষার্থী অসুস্থ হচ্ছে। রাতের বেলা কেউ অসুস্থ হলে, সকাল ৯টার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, নয়তো ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া লাগে।

আইন ও বিচার বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রাকিবুল বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ছুটে যেতে হয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা ময়মনসিংহ শহরে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অসংখ্য শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসে কিন্তু ফিরে যেতে হয় খালি হাতেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন হলেও মেডিকেল সেন্টারের সেবার মানে উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।

সার্বিক সংকট ও অসঙ্গতি নিয়ে 'ব্যথার দান' স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের অভাবে আমরা ল্যাব চালু করতে পারছি না। ফলে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও সেসব সেবা আমরা দিতে পারছি না। দীর্ঘদিন পরে থাকায় অনেক মেডিকেল সরঞ্জাম নষ্টও হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার আছেন মাত্র চারজন। নার্স-ক্রাফ, ওয়ার্ড বয়সহ সবমিলিয়ে আমাদের টোটাল স্টাফ মাত্র ১১ জন। এই সামান্য সংখ্যক স্টাফ আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। স্টাফ স্বল্পতার কারণে আমরা দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা কিংবা সপ্তাহের ৭ দিনই স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না। আমরা বছরে দশ লাখ টাকা বরাদ্দ পাই। এই বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের ঔষধ সরবরাহে যথেষ্ট নয়। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা রেজিস্ট্রার দফতরে আমাদের ডাক্তার, নার্স ও অর্থ বরাদ্দের চাহিদা জানিয়ে কাগজ জমা দিয়েছি। আশা করি তারা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার হলো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ সংকট আছে। চিকিৎসক, নার্স, অ্যাটেনডেন্স অনেক রকমের জনবল প্রয়োজন। রোগ নির্ণয়, মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আধুনিক সরঞ্জামাদিও দরকার হয়। আমরা চেষ্টা করবো মেডিকেল সেন্টারে এসব সঙ্কট দূর করতে। প্রয়োজনীয় ঔষধ ক্রয়ে বরাদ্দ বাড়ানো আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ