জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিকে স্মার্ট লাইব্রেরিতে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানান গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. জালাল উদ্দীন।
এর আগে গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সভাপতিত্বে উপাচার্য কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্রন্থাগার কমিটির ৯ম সভায় এ পরিকল্পনা গৃহীত হয় বলে জানান জালাল উদ্দীন।
ইতোমধ্যে স্মার্ট লাইব্রেরি বিনির্মাণে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে আহ্বায়ক ও গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. জালাল উদ্দীনকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, স্মার্ট লাইব্রেরির অংশ হিসেবে শিক্ষকদের জন্য থাকবে একটি টিচার্স কর্নার। যেখানে শিক্ষকরা গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে গ্রন্থাগারের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে ক্যারিয়ার কর্নার ও সাইলেন্ট জোন। ক্যারিয়ার কর্নারে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কেনা চাকরির বিভিন্ন বই নিয়ে গ্রুপ স্টাডি করতে পারবেন। অন্যদিকে সাইলেন্ট জোনে থাকবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা; যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা পিডিএফ ডাইনলোডসহ গবেষণার কাজ করতে পারবেন।
স্মার্ট লাইব্রেরি বিনির্মাণে অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফটোকপি সার্ভিস চালুকরণ। এছাড়াও চলমান লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে থাকছে সফটওয়্যারভিত্তিক কার্যক্রম, যার মাধ্যমে লাইব্রেরির হালনাগাদকৃত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সার্ভারে সংযুক্ত করা হবে। পাশাপাশি প্রতি অর্থবছরের ক্রয়কৃত বইয়ের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের তথ্যও থাকবে।
স্মার্ট লাইব্রেরি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহিনী ইসলাম বলেন, স্মার্ট লাইব্রেরি তৈরির খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তির। আশা করছি শিক্ষার্থীরা স্মার্ট লাইব্রেরির ফলে লাইব্রেরিমুখী হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর স্যারের চিন্তাভাবনাকে সম্মান জানাচ্ছি। স্যার স্মার্ট লাইব্রেরি তৈরিকরণে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন তা সকল সমস্যা দূর করতে পারবে বলে মনে করছি।
একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, লাইব্রেরি হতে হবে এমন, যেখানে মুক্ত জ্ঞানচর্চার নীরব প্রতিযোগিতা সবাইকে আকৃষ্ট করবে। যেকোনো শিক্ষার্থী নিঃসঙ্কোচে লাইব্রেরির আমেজ নিতে আসবে। বহুদিনের এসব কল্পনায়, জল্পনায় এবং অসুবিধায় থাকা লাইব্রেরির সমস্যা সমাধানে উপাচার্য স্যার স্মার্ট লাইব্রেরি গড়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন নিঃসন্দেহে তা সময় উপযোগী পদক্ষেপ।
নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাজহারুল হোসেন তোকদার বলেন, লাইব্রেরি শুধু পড়াশোনায় নয়, মানসিক গঠনেও ছাত্রসমাজকে প্রভাবিত করে। বই পড়লে একজন শিক্ষার্থী হয়ে ওঠে আচরণে মার্জিত, চিন্তায় স্বতঃস্ফূর্ত ও কর্মে দৃপ্ত। এটি নিঃসন্দেহে পাঠকদের লাইব্রেরিমুখি করবে, যা স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সাথে, স্মার্ট জেনারেশনের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. জালাল উদ্দীন বলেন, উপাচার্য স্যারের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শে আমরা একটি স্মার্ট লাইব্রেরি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের এখানে ইন্টারনেট সমস্যা অনেক দিন ধরেই। মাঝে মাঝে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত কাজগুলো বিভিন্ন সময় আটকে থাকে। শিক্ষার্থীরাও ইন্টারনেট সুবিধার ব্যত্যয় ঘটায় অভিযোগ করে থাকেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম আল মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার রকিবুল ইসলাম রাকিবকে বিভিন্ন সময় বলেছি, কিন্তু তাদের দায়িত্বের গড়িমসি দেখতে পেয়েছি। সমস্যা বেশ কয়েকবার বলার পর সমাধান করে দিলেও স্থায়ী কোনো সমাধান পাচ্ছি না। যার ফলে আমাদের স্বাভাবিক কর্মপরিকল্পনা ও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সবাই সঠিকভাবে সহযোগিতা করলে খুব দ্রুতই আমরা স্মার্ট লাইব্রেরির সুবিধা ভোগ করতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে চলছি। শিক্ষা ও গবেষণার অংশ হিসেবে আমরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরিকে স্মার্ট লাইব্রেরিতে রুপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছি। স্মার্ট লাইব্রেরি বিনির্মাণে ইতোমধ্যে আমরা কমিটিও গঠন করে দিয়েছি। দ্রুততম সময়ে আমরা একটি সময়োপযোগী স্মার্ট লাইব্রেরি দেখতে পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।
উল্লেখ্য, প্রতি অর্থবছরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক/কর্মকর্তার সর্বোচ্চ পাঁচ (০৫) কপি বই ও অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই (০২) কপি বই ক্রয় করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। মোট ৪০ হাজার অধিক বইয়ের সমাবেশ ঘটেছে লাইব্রেরিতে। শুক্রবার বন্ধ থাকলেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলো খোলা থাকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ও সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই লাইব্রেরি।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ