শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

'পাখিশূন্য' জাহাঙ্গীরনগরে পাখি মেলা 

প্রকাশনার সময়: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৬ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:০৭

'পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন' স্লোগানে পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আয়োজন করা হয়েছে ২২তম পাখি মেলা।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম মেলার উদ্বোধন করেন।

পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। কিন্তু অতিথি পাখিদের ঘিরে যে পাখি মেলার আয়োজন করা হয় তা আজ বিলুপ্তপ্রায়।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে একটু বাড়তি উষ্ণতার খোঁজে বিশ্বের দূর-দুরান্ত থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘন গাছপালাসমৃদ্ধ ও বেশ কয়েকটি বড় লেক থাকায় শীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে অতিথি পাখির আগমন।

১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাবিতে অতিথি বা পরিযায়ী পাখি আসে। সেবার ৪ হাজারের মতো পাখির দেখা মেলে। গতবছর এই সময়ে দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসে। এর আগে, ২০২১ সালে মোট ৪ হাজার ৫০০ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে ২০২০ সালের কারোনাকালীন মৌসুমে। সেবার ৮ হাজারের বেশি অতিথি পাখি এসেছিল। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আসা মোট পাখির সংখ্যা যথাক্রমে ৬৭৮০, ৪৭৩১, ৪৯৭৫, ৪৭০৯ টি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর পাখি সংরক্ষণে সচেতনতামূলক নানা ব্যানার, সভা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। মূলত ক্যাম্পাসে পাখি সংরক্ষণে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা না থাকা ও মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া যত্রতত্র উঁচু উঁচু ভবন তৈরি করে পাখিদের 'ফ্লাইং জোন' ধ্বংস করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির আনাগোনা কমে গেছে। এছাড়া নিয়মিত বহুতল ভবন তৈরির শব্দ, লেকের আশেপাশে জনসমাগম বৃদ্ধি, লেকের পানির গুণগত মান নষ্ট হওয়া, লেকগুলোর সুয়ারেজ সিস্টেম না থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের গাফিলতিই পাখি চলে যাওয়ার জন্য দায়ী।

পাখি মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘গত দু-তিন বছর ক্যম্পাসে পাখি কম আসছে। এর প্রধান কারণ হলো জলাশয়ের পাড়ে জনসমাগম। মানুষের ভিড়ে পাখিরা বিরক্ত হয়। ফলে তারা সেখানে বসতে আগ্রহ দেখায় না।'

ক্যাম্পাসে পাখিদের অনূকুল পরিবেশ নিশ্চিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, 'গত কয়েক বছর আগেও আমরা যে জলাশয়গুলোতে পাখি দেখতাম এখন আর সেখানে পাখি দেখতে পাচ্ছি না। কারণ বহিরাগত দর্শনার্থীরা পাখিদের উত্যক্ত করে ফলে তারা চলে যায়। এখন শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের জলাশয়ে পাখি রয়েছে। কারণ সেখানে পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। সেখানে আমরা সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রেখেছি। আমরা চেষ্টা ক্যাম্পাসের সবগুলো জলাশয়ে এরকম পাখিদের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা।'

মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করার স্বার্থে আরোপিত বিধি- নিষেধ মানতে হবে।'

এবারের মেলায় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলারস দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করা হয়।

এছাড়া মেলায় প্রতি ক্যাটাগরিতে একজনকে বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড, কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ও স্পেশাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ