শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১’ বাতিল দাবিতে জাবিতে গণস্বাক্ষর

প্রকাশনার সময়: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৩

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১’ বাতিল চায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী পাঁচ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের অংশ হিসেবে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার উদ্যোগে গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় জাবির কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে 'জ্ঞান-বিজ্ঞান-মনুষ্যত্ব ধ্বংসের শিক্ষাক্রম: ২০২১ বাতিল কর' ব্যানারে এই গণস্বাক্ষর অভিযান অনুষ্ঠিত হয়।

গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন। এসময় তারা জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিলের প্রেক্ষিতে ৫ দফা দাবি জানায়।

দাবিগুলো হলো-

১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়া চলবে না। প্রতি ক্লাসে লিখিত পরীক্ষা চালু করতে হবে। পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেয়া চলবে না।

২. নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কমানো চলবে না।

৩. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি চিহ্নের মাধ্যমে মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে শিক্ষকদের হাতে মার্কস রাখা যাবে না।

৪. একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পর পর দু'টি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করতে হবে।

৫. প্রতি ক্লাসে রেজিস্ট্রেশন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজিব আহম্মেদ জেনিচের সঞ্চালনায় গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও কোনো শিক্ষা ব্যবস্থার এতো আমূল পরিবর্তন করা হয়নি। পরিবর্তন হয় একটা ধারাবাহিকতার মাধ্যমে। কিন্তু এখানে একদম নতুন একটা মডেল এনে দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কারিক্যুলামের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ কারিক্যুলাম নিয়ে কোনো সেমিনার করতে হলে উপাচার্যের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে কেন শিক্ষক বা বিভাগকে কোনো সেমিনার করতে হলে উপাচার্যের অনুমতি নিতে হবে? অর্থাৎ আমরা দেখছি, একটা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও কাজ করছে। আমরা অনেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ফ্যাসিজমের জায়গা নয়।’

নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য ‘অসৎ’ বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক রায়হান রাইন আরও বলেন, ‘শিক্ষা ধ্বংসের যে নকশা করা হচ্ছে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চলছে। আমি মনে করি, আন্দোলন আরো জোরদার করা উচিৎ। কারণ নতুন এ শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে অসৎ। কেননা, এর মাধ্যমে এমন প্রজন্ম তৈরি করা হবে, যারা প্রশ্ন করতে পারবে না। তাদের প্রশ্ন করার জায়গা আর রাখা হবে না।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিউজ্জামান ফরিদ। তিনি বলেন, আমরা চাই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মনুষ্যত্ব ধ্বংসকারী এমন শিক্ষাক্রম বাতিল হোক। শিক্ষা হলো ম্যান-মেকিং ক্যারেক্টার। শিক্ষা মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। কিন্তু এ শিক্ষাক্রমে তা নেই। নতুন এ শিক্ষাক্রমে মৌলিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। অর্থ্যাৎ তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান ছাড়াই একটা স্মার্ট জাতি তৈরি করার সাহস দেখাচ্ছে। এ শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা উপকরণ নিয়ে ব্যবসা বাড়বে, কোচিং-গাইড ব্যবসা শুরু হবে। অর্থ্যাৎ শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ তরান্বিত হবে।’

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ