রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে সম্প্রতি খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় হল প্রশাসন। দুপুরের খাবারে সাত টাকা এবং রাতের খাবারে তিন টাকা বাড়ানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, উপাচার্য তাদের অনুরোধে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন।

হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদ সূত্রে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাতের খাবার মিলিয়ে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১২ ডিসেম্বর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভায় দুপুরের খাবার ২৮ টাকা থেকে ৩৫ টাকা এবং রাতের খাবার ২২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এমন সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তারা খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিত করার অনুরোধ জানান। অন্যথায় ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

এদিন দুপুর দুইটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব ‘রাজশাহী বিশবিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন, খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে খাবারের মান ও মূল্য নির্ধারণ করবে। ছাত্রলীগের অনুরোধ রাখায় উপাচার্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তারা আন্দোলনে নামতে পারে ভেবে আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করি। আমরা প্রশাসনকে সিদ্ধান্তটি স্থগিত করার অনুরোধ জানাই। তারা এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আমরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে নামবো বলে জানাই। পরে প্রশাসন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এরপর আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবহিত করি যেন তারা আন্দোলন না নামে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতারা দেখা করার পর পৌনে তিনটার দিকে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সঙ্গে জরুরি সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে। এ ছাড়া সভায় বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা অংশ নেন।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিংয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যার তা অনুমোদনও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি জরুরি মিটিং ডাকা হয়। সেখানে খাবারের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, বিষয়টি আমি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছিলাম। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি ছাত্রলীগ নেতা ঠিক করেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি উত্থাপন করেছিল। শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় উপাচার্য স্যার আমাদের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তার প্রেক্ষিতে আমরা মিটিং করি। সেখানে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, খাবারের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের বৈঠকে। এর আগে কেউ কীভাবে পোস্ট করলো সেটা আমাদের জানার বিষয় না। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনঅফিশিয়াল বিষয়টি পাবলিক করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নয়া শতাব্দী/এসআর