ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাবির যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল অভিযোগ বক্সেই সীমাবদ্ধ

প্রকাশনার সময়: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৩২ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৯

যৌন নিপীড়ন বর্তমানে সমাজে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির বাইরে রাস্তাঘাট, বাজার, কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সকল জায়গাতেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ক্যাম্পাসে এই নিপীড়ন প্রতিরোধ করতে ২০১১ সালে ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল’ প্রতিষ্ঠা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমানে এই সেল শুধু একটি অভিযোগ বক্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসে দৃশ্যমানও নেই কোনো প্রচার-প্রচারণা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতকরা ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীই এই সেল সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে এই সেলের সভাপতির জন্য। অধিকাংশ সময়েই এটি বন্ধ থাকে। পাশেই রয়েছে একটি অভিযোগ বক্স। সেলের আহ্বায়ক বলেন, বর্তমানে কোনো অভিযোগ জমা নেই।

এর আগে ২০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি গবেষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম। তার গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০০ জনের মধ্যে ১৮৪ জন শিক্ষার্থীই এই সেল সম্পর্কে জানেন না। যা শতকরা হিসেবে দাঁড়ায় ৯২ শতাংশ।

অর্ধযুগে যেই সেল তার অস্তিত্ব সম্পর্কেই শিক্ষার্থীদের জানান দিতে পারেনি সেই সেল তাদের প্রতিকার এনে দেবে কীভাবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এই সেল সম্পর্কে জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই সেল নিয়ে কখনো প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখিনি। বলা বাহুল্য এটা একটা নামেমাত্র সেল। শিক্ষার্থীদের এই সেল সম্পর্কে অজ্ঞতার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই।

আইন বিভাগের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন না। কারণ শেষ পর্যন্ত এই ধরনের অভিযোগের কোনো বিচার পাওয়া যায় না। প্রশাসনের উচিত এই ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সাথে দেখা। সেইসাথে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী অশেকা জাইমা খান বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ বিষয়ক এই সেল সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। কীভাবে, কার কাছে অভিযোগ করতে হবে তাও জানি না। অভিযোগ করার বিষয়টি আমাদের জন্য আরও সহজ করা হোক। এই সেলটি ক্যাম্পাসের একটি স্থানে সীমাবদ্ধ না রেখে মেয়েদের প্রতিটি হলে করা হোক। সেইসাথে অভিযোগের বিষয়টিতে আরও গোপনীয়তা অবলম্বন করা হোক। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক দ্বারা হয়রানির শিকার হয়। তবে অ্যাকাডেমিক অবস্থার কথা চিন্তা করে অভিযোগ করে না। যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।

যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের তেমন কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। তবে জানুয়ারিতে ক্যাম্পাস খুললে প্রত্যেক বিভাগ থেকে দুইজন শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষক নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। আমাদের অফিসের নির্দিষ্ট কোনো স্টাফ নেই। তাই নিয়মিত খোলা হয় না। তবে মিটিংয়ের সময়ে খোলা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে সেলের আহ্বায়ক আরও বলন, আমাদের অভিযোগ বক্স রাখা আছে। যে কেউ চাইলে অভিযোগ রেখে যেতে পারে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরাই অভিযোগ করে আর এগোয় না। আমাদের সহযোগিতা না করলে তো আর সমাধান করা যাবে না। তবে আমরা দায়িত্ব নেবার পর দুইটি রিপোর্ট পেশ করেছি। বর্তমানে কোনো অভিযোগ নেই।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ