বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার শিক্ষকের পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছর শিক্ষকতার শর্ত থাকলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. হাসিবুর রহমানকে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে এ শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছর শিক্ষকতার পূর্বেই তাকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বশেমুরবিপ্রবিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছর পূর্ণ হওযার পূর্বেই তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির আবেদন করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি অনুমোদন হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৩ বছর ১ মাস কর্মরত থেকেই তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষকের অভিজ্ঞতাকে সহকারী অধ্যাপকের সমমান দেখানো হয়েছে।
এছাড়া, আরও অভিযোগ রয়েছে, ড. হাসিবুর রহমান গণ বিশ্ববিদ্যলয়ে থাকাকালীন শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত হওয়ায় ২০১৬ সালের জানুযারি থেকে বহিষ্কার ছিলেন। লিখিত ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মার্চ মাসে তাকে পুনঃনিয়োগ করা হয়। তবে পদোন্নতির আবেদনপত্রে তিনি বহিষ্কার থাকাকালীন অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। ড. হাসিবুর রহমানের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপত্রে বহিষ্কারের তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ড. হাসিবুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় তিনমাস বহিষ্কার ছিলেন। ২০১৬ সালের মার্চে তারা পুনরায় যোগদান করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ড. হাসিবুর রহমান বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন প্রায় চার বছর আমাদের বেতন বৃদ্ধি করা হচ্ছিল না। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকজন একটা মিটিং করেছিলাম আর এর জেরেই আমাদের তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়। তবে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং আমাদের ওই কয়েকমাসের বেতনও ফিরিয়ে দেয়। তবে যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তাই তাদের বিধি অনুযায়ী আমাদের লিখিত ক্ষমা চেয়ে চাকরিতে যোগদান করতে হয়। আর গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে যে অভিজ্ঞতা সনদ দেয়া হয়েছে সেখানে তারা ওই মাসগুলোসহই সনদ দিয়েছেন এবং আমি সেই অনুযায়ী অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেছি।
শর্ত পূরণ না করেই সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার প্রসঙ্গে এই শিক্ষক বলেন, আমি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর শিক্ষকতা করেছি। এর মধ্যে প্রায় তিন বছর সিনিয়র প্রভাষক ছিলাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা অর্ধেক কাউন্ট হলেও ৫ বছর অভিজ্ঞতা হয়। সিনিয়র প্রভাষক সহকারী অধ্যাপকের ইকুইভ্যালেন্ট কিনা এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না। এটি প্লানিং কমিটি এবং উপাচার্য বলতে পারবেন। একজন আবেদনকারী হিসেবে আমি বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করে আবেদন করেছিলাম। এই বিবেচনার অনুরোধতো আমি করতেই পারি। এখন তারা কিভাবে কিসের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করেছে সেটি তারাই ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
এবিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন সভাপতি এবং প্লানিং কমিটির প্রধান ড. মো. আবু সালেহ বলেন, আমরা সিনিয়র লেকচারার সহকারী অধ্যাপকের সমমান বা সমমান নয় এমন এমন কিছুই বলিনি। আমরা আবেদনের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটির বিষয় থাকায় ড. হাসিবুর রহমান সময়ের আগেই পদোন্নতি নেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং উপাচার্যের সাথে ভালো সম্পর্কের জেরেই উপাচার্য তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি উপাচার্য শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে তাকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যও বানিয়েছেন। এছাড়া, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চেকের মাধ্যমে বিভাগের অর্থ আত্মসাৎ, প্রশ্নফাঁস এবং নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ থাকলেও সেসব অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি।
বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, সিনিয়র প্রভাষক সহকারী অধ্যাপকের ইকুইভ্যালেন্ট ধরা যায়। কারণ একজন কি ১২ বছর প্রভাষক থাকবে নাকি? আর তার পিএইচডি ডিগ্রি আছে, আর্টিকেল আছে তাই তিনি পদোন্নতি পেতেই পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগের আমলে তো এরচেয়েও খারাপ হয়েছে। তোমরা সেগুলো নিয়ে বলো না কেন? আগে তো বিএ পাস করা ব্যক্তিকে,বিএসসি অনার্সও না বিএ পাস করা ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কর্মকর্তা থেকে লেকচারার বানানো হয়েছে। সেসব নিয়ে বলো।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বলছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদ রয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক পদকে সহকারী অধ্যাপক সমমান দেখানোর সুযোগ নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিয়মের বত্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদ রয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক পদকে সহকারী অধ্যাপককে সমমান বলার সুযোগ নেই। যদি এমন হতো যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সহকারী অধ্যাপক পদই নেই তখন বিষয়টি বিবেচনা করা যেত।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. তাহের বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি কোনো একজনের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে বা নিয়মে ছাড় দেয় তাহলে পরবর্তীতে আরও অনেকেই এ ধরনের সুযোগ চাইবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সিস্টেমই তখন ভেঙে পড়বে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত নীতিমালা যেমন রয়েছে সেই অনুযায়ীই সবকিছু পরিচালনা করা।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ