ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চবিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

প্রকাশনার সময়: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:২০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে এবং প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বাংলা ও আইন বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ এবং দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতভাবে চলমান ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে-এর পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

কর্মসূচিতে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, চবি উপাচার্য অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে রাতের আঁধারে অবৈধ নিয়োগ বোর্ড পরিচালনা করে উপাচার্য পদে থাকার জন্য নৈতিক সমর্থন হারিয়েছে। তিনি এই পদকে কলঙ্কিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় হলো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং প্রশাসন। তাদের পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে আমরা শিক্ষক সমাজ বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের একদফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া অবধি আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, আইন বিভাগে শিক্ষক প্রয়োজন নেই। তবুও উপাচার্য তার নিজের ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার করে আইন ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড আয়োজন করেছে। কিন্তু নির্বাচন বোর্ডের সদস্য নির্দিষ্ট কয়েকজন প্রার্থীকে বাঁচাই করে নিজে গাড়িতে উঠিয়ে অজানা স্থানে বোর্ড পরিচালনা করার জন্য নিয়ে যায় এবং নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করে। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কী হবে?

এছাড়া নিয়োগ বোর্ডের সাথে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে বলেন, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আইন লঙ্ঘন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসকল অতিরিক্ত শিক্ষক কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে? ওনারা কি আপনাদেরকে পড়াবেন?

অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, এখন নির্বাচনের সময়। আজ আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। কিন্তু চবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের লাগামহীন নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশাসনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদ দিয়ে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা চরম লজ্জাজনক বিষয়।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সদস্যদের সামলাতে উপাচার্য শিরীণ আখতার পুলিশকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এটা কেন করেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রায় অর্ধমৃত। পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার পূর্বে আমরা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আযম। তিনি বলেন, আমার বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। তবুও অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বসেছে। এটা আমার বাংলা বিভাগসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চরম লজ্জাজনক। এমন ধরনের নিয়োগ বাংলা বিভাগে কখনো হয়নি।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে আইন করেছে। বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি ও পরিকল্পনা কমিটি এই আইনের অংশ। আজ আমাদের ক্লাসে থাকার কথা। আমাদের দাবি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া আইনের অধীনে চলবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠু পথে পরিচালনার জন্য আমাদের এই কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণের লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, গতকাল উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীর সাথে অনেক অসৌজন্যমূলক আচরণ করে হুমকি দেন। আজ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড নেতিবাচকভাবে সংবাদ পত্রিকার পাতায় পাতায়। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয় বলে উপাচার্যের প্রতি ভৎসনা করেন তিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবে দেখতে চাই না।

অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান। তিনি বলেন, আমাদের আইন বিভাগে ২৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে তিনজন শিক্ষাছুটিতে আছেন। আমাদের বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের বিভাগে ক্লাস নেওয়ার পরও আমাদের অতিরিক্ত ক্লাসও নেওয়া সম্ভব। আমরা এ নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে চিঠিও দিয়েছি যে আমাদের আর শিক্ষক প্রয়োজন নেই। তারপরেও অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কেন হচ্ছে? দেশের কোষাগারের অর্থের অবমূল্যায়ন আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই এসব শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদে আমরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অতিদ্রুত পদত্যাগ দাবি করছি।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা (আঁখি) এবং ওশানোগ্রাফি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক।

এছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তনিমা সুলতানাসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ