ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিজয়ের ৫৩ বছরে তারুণ্যের ভাবনা

প্রকাশনার সময়: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:১৫

বিজয়ের সূচনালগ্নে যে শিশুর জন্ম হয়েছিল আজ সে বায়ান্ন বছরের পৌরুষে অভিষিক্ত। স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসের আবহে, দেশপ্রেমের চেতনায়, দেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিবেদিত মনোভাব নিয়ে সে এতদূর এসেছে কি না, না হলে কেন হয়নি, এগুলো পর্যালোচনা করা এখন যৌক্তিক বিষয়। নতুন প্রজন্মের জন্য আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের আর্থ-সামাজিক ভবিষ্যৎ তৈরি হয়েছে, সব কিছুই নতুন করে ভাববার দাবি রাখে। বিজয়ের এই ৫৩ বছরে এসে বিজয়ের আনন্দ ও আগামীর সম্ভাবনা ও আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের ভাবনা তুলে ধরছেন নয়া শতাব্দীর ববি প্রতিনিধি মো. ইমদাদুল ইসলাম৷

‘বিজয়ের চেতনাকে লালন করতে হবে’

১৬ ডিসেম্বর শুধুমাত্র একটি দিন কিংবা উৎস নয়। বাঙালি জাতির দীর্ঘ নয় মাসের রূপচিত্র এ দিনটি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ ১৬ ডিসেম্বর। এ বিজয় আমাদের আলাদা এক পরিচয় দিয়েছে। বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর মতো সাহস দিয়েছে। তবে আমরা এ সম্মান কিংবা যোগ্যতা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি? স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার পিছনে একমাত্র লক্ষ্য ছিলো সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সকলে হাসিখুশিতে জীবনযাপন করবে। কোনো হিংসা বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। অথচ আজ দেশের চিত্র কিছুটা অন্যরকমই। বিজয়ের চেতনা থেকে আমরা অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছি। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই নতুন রূপে উজ্জীবিত হওয়া সম্ভব। তারাই আগামী বিশ্বকে নেতৃত্ব প্রদান করবে। নিজেকে বিজয়ের চেতনায় উজ্জীবিত করতে হবে। বিজয়ের চেতনাকে বুকে লালন করতে হবে। মনেপ্রাণে দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। শুধুমাত্র একদিন লাল সবুজ পরিধান না করে সারাবছর বুকে লাল সবুজ রঙ কে ধারণ করতে হবে। তবেই তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হবে সুন্দর বাংলাদেশ।

ফারহানা আফসার মৌরী

শিক্ষার্থী, ভুতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজয় দিবসের শপথ নিন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার

বিজয় মানে সব পাওয়ার আনন্দ। বিজয় মানে সব হারানোর বেদনা। বিজয় যোগায় দাসত্ব ও শত্রুর শৃঙ্খল হতে মুক্তি। বিজয় যোগায় আমাদের জীবনে সব বাধা-বিপত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক মহান অনুপ্রেরণা। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রাম শেষে আমরা বাঙালি জাতি পাই একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি মানচিত্র ও একটি লাল-সবুজের পতাকা। আমাদের বিজয় অর্জনের সংগ্রামের মূল প্রত্যাশা ছিল সকল প্রকার বৈষম্য, শোষণ, লাঞ্চনা-বঞ্চনা, অন্যায়-অনাচার, বিভেদ ও দুর্নীতি মুক্ত সুখী সম্বৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কিন্তু আজও বিজয়ের ৫২ পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে সকল প্রকার শোষণ, অন্যায়-অনাচার, বৈষম্য, বিভেদ ও দুর্নীতির কালো প্রেতাত্মা। এটা কি আমরা চেয়েছিলাম? এখনই সময় এসেছে এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার। আসুন আমরা সবাই মিলে সকল অন্যায় ও দুর্নীতিকে না বলি এবং সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই মিলে যে যার অবস্থান হতে এগিয়ে আসি। এটাই হোক আমাদের পক্ষ হতে বিজয় দিবসের সবচেয়ে বড় উপহার আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য।

রাফি আহমেদ খান শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

‘বিজয় হোক সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে’

অস্তিত্বের রংয়ে মাখা প্রিয় লাল সবুজের পতাকা আমরা পেয়েছিলাম, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠে নেতৃত্বে এমন যাদু ছড়িয়েছিলো যে, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, মুসলিম-হিন্দু সকলেই এক বাঙালি পরিচয়ে একটি স্বাধীন ভুখন্ডের শপথ নিয়েছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী সকলের মাঝে ছিলো একই ভ্রাতৃত্ববোধ। এই বন্ধনের জোরেই সবাই একতাবদ্ধ হতে পেরেছিলো, অর্জন করতে পেরেছিলো কাঙ্খিত বিজয়। বিজয়ের অর্ধশতক শেষে, এই বিজয়মুকুট রক্ষা করার দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মের হাতে। সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলা ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রবোধ এই প্রজন্মকে এককসত্তায় পরিণত করছে না তো? বাঙালির পরিচয়ের উর্ধ্বে গিয়ে ধর্ম, লিঙ্গ, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক যোগ্যতা যখন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তখন আলাদা আলাদা পরিচয়ে আলাদা দল ও সেই দলের আলাদা স্বকীয়তা সৃষ্টি হয়। তাই সোনার বাংলাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মতো করে রক্ষা করতে হলে সকল বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, প্রতিটি পর্যায়ের মানুষের মতের গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ফারজানা ফেরদৌস প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

‘আমার গর্ব আমার দেশ, বিজয় উল্লাসে বাংলাদেশ’

বাঙালি জাতি মানে আমাদের জন্য যতগুলো বিশেষ দিন রয়েছে এগুলোর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর হলো অন্যতম একটি বিশেষ দিন কারণ এই দিনটিতে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে তার পূর্ণতা পায়। পরিচয় মিলে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে। ২০২০ সাল ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, কিন্তু সেই সময় করোনা মহামারির জন্য বিজয় দিবস উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। এই দিনটি উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই প্রতিটি সরকারি কার্যলয়, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেজে ওঠে নতুন সাজে। লাল সবুজ আলোর বাতির আলোর সেজে ওঠে পুরো দেশটা। এমন আলোকসজ্জা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মনে করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির ১৯৭১ এর ত্যাগের কথা, মনে করিয়ে দেয় তাদের সাহসিকতা এবং দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের ইতিহাস। ১৬ ডিসেম্বর এই বিজয়ের দিনটি অর্জনের পিছনে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিবাহিনী ও মা-বোনের ত্যাগ ও অবদানের ইতিহাসকেই গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয় প্রতি বছরের এ আয়োজন। পুরো ক্যাম্পাসটি লাল সবুজ আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। দিনটি জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন আরও আছে দেওয়ালিকা প্রদর্শনি। একজন বাঙালি হিসেবে গভীরভাবে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও অবদান, মুক্তিবাহিনীর আত্নত্যাগ ও মা-বোনের ত্যাগের কথা। এ ইতিহাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গেঁথে থাকবে বাঙালি হৃদয়ে। ভালোবাসি মাতৃভাষা এবং এই মাতৃভূমিকে।

রেদোয়ান রাব্বি শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ