গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ ডিসম্বর) দিবসটি উপলক্ষ্যে আলাচনা সভা, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ, গোপালগঞ্জ শহরের শেখ কামাল স্টেডিয়াম সংলগ্ন শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আনন্দ র্যালি এবং দিনব্যাপী প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়াজন করা হয়।
দিবসের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১৫মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ কিউ এম মাহবুবের নেতৃত্বে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ ও সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ শহরের শেখ কামাল স্টেডিয়াম সংলগ্ন শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সকল অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, সকল আবাসিক হল প্রশাসন, কর্মচারী সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি ও শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
এরপর শিক্ষক সমিতির আয়োজনে বিজয় র্যালি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় ট্রেজারার বীর মুক্তিযাদ্ধা অধ্যাপক ড. মো. মোবারক হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে যখন আমরা বিজয়ের খবর পাই, তখন আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটা বারান্দায় বসে ভাত খাচ্ছিলাম। যুদ্ধের দিনগুলোতে কনকনে শীতের মধ্যে মাটিতে একটা কাপড় বিছিয়ে রাতে পার করতে হয়েছে আমাদের। কত কষ্টের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। অথচ আমরা আজও মুক্তি পাইনি। হয়তো ভারতের সহযাগিতার কারণে আমরা মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করছি বলেই এর মর্ম বুঝি না। যদি ভিয়েতনামের মতো বছরের পর বছর যুদ্ধ করতে হতো, তাহলে হয়তো আমরা স্বাধীনতার মর্ম বুঝতাম।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি যা ভিক্ষা করে আনি, সব চাটার দল খেয়ে ফেলে। আমার দেশের গরিবরা কিছুই পায় না।’ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার দুঃখ এটাই যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা ১০টাকা বরাদ্দ দিলে অনেক জায়গায় ২টাকাও ব্যয় করা হয় না। আবার আমরা চুরি করে বিদেশে পাচার করি। আমরা যদি দেশের টাকা দেশের কাজে লাগাতে পারি, তাহলে ভিয়েতনাম নয়, আমরা অনেক দেশের চেয়ে সবদিক থেকে উন্নত হবো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, ত্রিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, এই স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে আরও নাম না জানা যে মহান বীরদের অবদান রয়েছে, তাদের সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা অনেক বেশি সৌভাগ্যবান যে, জাতির পিতার জন্মস্থানে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়বার, পড়াবার, সেবা দেওয়ার সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা তার সমাধিসৌধের কাছে থাকতে পারছি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার, আমাদের প্রধামন্ত্রী সেই কাজ করে চলেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে, স্মার্ট বাংলাদশের বিনির্মাণে কাজ করে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, ৭ কোটি মানুষের দেশে অভাব থাকলেও ১৭ কোটি মানুষের দেশে এখন আর কোনো অভাব নেই। আর স্মার্ট বাংলাদশ হবে অর্থনীতিতে আত্মনির্ভরশীল, যেখানে কোনো অভাব-অনটন থাকবে না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড এ কিউ এম মাহবুব বলেন, পাকিস্তানিদের ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি পেতে যারা দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রাম করেছেন, যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মবলি দিয়েছেন, যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জীবন দিয়ে আমাদের এই স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন, তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা। আমাদের এই প্রজন্ম সংগ্রাম দেখেনি, তারা বিজয় দেখেছে। যে বিজয় ক্রয় করা নয়, ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। আর এই বিজয়কে রক্ষা করতে যদি প্রয়োজন হয় আমাদের আবারও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যারা এই দেশটাকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। তারপরও যারা বঙ্গবন্ধুর সংবিধান নিয়ে কথা বলে, তাদের রুখে দিতে হবে। একজন যোদ্ধা যেমন জীবন দিয়ে হলেও দেশের পতাকা লুণ্ঠিত হতে দেয় না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই দেশের পতাকার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন। একইভাব আমাদেরও উচিত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুক চিতিয়ে রক্ষা করা।
এছাড়াও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবন ও হলসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত এবং সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ‘ওয়ান্স এগেইন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ