ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী: মুনতাসির মামুন

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৯

‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী বলি। কারণ তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ বা তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো অন্যায় কাজ করলে তার প্রতিবাদ করেন না। কারণ, সবাই ভিসি হবেন, প্রো-ভিসি হবেন, প্রভোস্ট হবেন। এই ছোট ছোট বিষয়গুলির মোহে পড়ে এগুলোর প্রায়োরিটি দেয়। যেই কারণে তারা ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী’।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে চবি উপাচার্য সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চবি প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন। এর আগে সকাল ১০টায় বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

চবি এস্টেট শাখার প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের সঞ্চালনায় বুদ্ধিজীবী স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ, প্রধান অতিথি ছিলেন, চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, স্বাগত বক্তব্য দেন চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার, মুখ্য আলোচক ছিলেন চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।

আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, অনেকের প্রশ্ন বুদ্ধিজীবীদের কেনো হত্যা করা হলো? এর একটা উত্তর হতে পারে যে, ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠরা মনে করতো পাকিস্তানের অর্ধেক হলো মুসলমান। তারা পুরোপুরি পাকিস্তানি নয়। কারন বাঙালিরা ভাত খায়, বাংলায় কথা বলে তো তারা পাকিস্তানি হতে পারে না। তারা মনে করতো আমরা অর্ধেক বাঙালি, বাকি অর্ধেক হিন্দু। কারণ আমরা উর্দুতে বা পাঞ্জাবিতে কথা বলি না এবং আমরা হিন্দুস্তান দ্বারা প্রভাবিত। এবং ওরা ভাবতো আমরা বেয়াদব কারণ, ওরা দেখতো আমরা কথায় কথায় প্রতিবাদ করি, পাকিস্তানে তো এগুলা হয় না। তারা মনে করেছিল বুদ্ধিজীবীদের মেরে ফেলা হলে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সকল আন্দোলন বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। এ পরিস্থিতিগুলোর জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা শুরু হলো।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছিল। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হলো এবং শিক্ষকরা শহীদ হলেন। যার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। একই সঙ্গে পরবর্তীকালে বিভিন্ন এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলো। সুতরাং এটা সুনির্দিষ্টভাবে পূর্বপরিকল্পিত এবং তারা মনে করেছিলো বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলে হিন্দু প্রভাবমুক্ত একটি জাতী গঠন করা যাবে যারা বেয়াদবি করবে না, যারা পাকিস্তানের অধীনে থাকবে এবং তাদেরকে মুসলমান করা যাবে। কারণ তাদের মতে, বুদ্ধিজীবীরা মানুষকে বেয়াদবি শিখায়।

মুনতাসির মামুন বলেন, যখন আমরা বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা বলি তখন ধরে নিই যে শুধু মিরপুর বা রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই দুটি স্থান হলো প্রতীকী। আগে বুদ্ধিজীবীরা ভণ্ড ছিলেন না। তাই তারা মৃত্যুতে ভয় পেতেন না। অথচ আমরা এখন বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা শহীদ হওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। সুবিধা পাওয়ার জন্য যাননি। সামরিক আমলারা প্রথম তাদের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন যাতে তারাও সুবিধা পান। এতে করে মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ছয়বার তালিকা করা লাগে। পুরো ব্যাপারটা অর্থের আবর্তে চলে গেছে। পৃথিবীতে সব সময় রাজাকারদের, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করা হয়। বাংলাদেশের ছয়বার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও করা হবে এমন একটা অবস্থা। এটা বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। পৃথিবীর কোন দেশে বুদ্ধিজীবী দিবস নেই। কারণ কোন দেশে এত পরিমান বুদ্ধিজীবী শহীদ করা হয়নি।

তিনি বলেন, সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবীরা সেটা করেন না। যে কারণে বুদ্ধিজীবীরা মৃত্যুতে ভয় পাননি। সৃজনশীল বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কমে আসছে। এটা কোন রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। আমি আমাদের সহকর্মীদের বলবো, আপনারা যদি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা করে থাকেন তাহলে ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী হবেন না। সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হবেন। আপনারা যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন তাহলে আপনাদের আজকের এ শ্রদ্ধা নিবেদন যথার্থ হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙালিরা ভারতের চর। আমাদেরকে তারা মুসলমানও মনে করতো না। আমরা বুদ্ধিজীবী বলতে মনে করতাম শিক্ষকদের, যারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন, লেখালেখি করতেন। তারা লুকিয়ে ছিলেন। তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিল রাজাকাররা। যেভাবে বুদ্ধিজীবীরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা এদেশের মানুষ সবসময় মনে রাখবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ