ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাবির হলে মেয়েদের রাত ৯টার মধ্যে প্রবেশের নির্দেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

প্রকাশনার সময়: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:২৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলে মেয়েদের প্রবেশের সময়সীমা রাত নয়টা পর্যন্ত বেধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরও যারা হলের বাইরে থাকছে তাদের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হল প্রাধ্যক্ষদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক স্বাক্ষরিত আবাসিক ছয়টি ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর মেয়েদের হলে প্রবেশের চূড়ান্ত সময়সীমা সংক্রান্ত এক চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিয়ম করা হয়েছে।

প্রাধ্যক্ষদের দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ মার্চ, ২০২৩ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সকল আবাসিক ছাত্রী হলসমূহে অবস্থানরত ছাত্রীদের হলে প্রবেশের শীতকালীন (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সর্বোচ্চ সময়সীমা রাত নয়টা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় আবাসিক ছাত্রী উল্লেখিত সময়সীমার পরও হলের বাইরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নির্দেশনার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের আবাসিক সানজিদা ঢালী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত আটটার পর এমনিতেও হল থেকে বের হতে দেয় না। তবে আগে যে কোনো সময় হলে প্রবেশ করা যাবে এমন নিয়ম ছিলো। এখন সেটাও বন্ধ করে দিচ্ছে। জরুরি কোনো কাজে বাইরে থাকলেও একজন ছাত্রীকে হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট হেনস্থার শিকার হতে হয়। অভিভাবকের আপত্তি না থাকলেও হল প্রশাসন আপত্তি করে। কোনো ছাত্রীর টিউশনের কারণে রাত হলেও তাকে হলে দরখাস্ত দিতে হয়। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীর ক্ষেত্রে কি এতো বেশি চিন্তিত হওয়ার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি?

মন্নুজান হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, রাত আটটার পর হলগেটে সামান্য খাবার বা একটা ক্যালকুলেটর পর্যন্ত আদান-প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয় না। যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, খাবারের সঙ্গে বাইরে থেকে কেউ বিষ দিতে পারে, ক্যালকুলেটর না দিয়ে কেউ এটম বোমও দিতে পারে। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এ ধরনের যুক্তিই আমাদের শুনতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের নিয়ম প্রবর্তনের চেয়ে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত বেশি জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবা কানিজ কেয়া। তিনি বলেন, ব্যক্তি নিরাপত্তার চেয়ে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে। শুধু নিয়ম করে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। হলগুলোর সামনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়াও ক্যাম্পাসের বাকি সবখানেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। মেয়েদের হয়রানির প্রেক্ষিতে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তবেই মেয়েদের প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, এটা খুবই দু:খজনক, বাইরের নিরাপত্তার বিষয়তো প্রক্টর অফিসের দেখার কথা। ছেলেদের ক্ষেত্রে পুরো সময় খোলা রেখে মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা উচিত না। মেয়ে হলেও তাদের জরুরি প্রয়োজন থাকতেই পারে। তবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করা ভালো।

রাতে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে দেওয়া হয় না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা একেবারে উচিৎ না। প্রয়োজনে তারা চেকিং ব্যবস্থা রাখুক।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমরা মেয়েদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাত নয়টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা দিয়েছি। তাছাড়া নয়টার মধ্যে ক্যাম্পাসের সকল দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর মেয়েদেরতো হলের বাইরে আর কোনো দরকার থাকার কথা না। যদি কারও বিশেষ কোনো দরকার থাকে তবে সে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে বাইরে থাকতে পারবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ