ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

প্রকাশনার সময়: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:৩৮

আজ ২৫ নভেম্বর ২০২৩ তেত্রিশ বছর পূর্ণ করে চৌত্রিশ বছরে পদার্পণ করছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় শিক্ষাকার্যক্রমের।

বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল বা অনুষদের সংখ্যা ৮টি এবং ডিসিপ্লিন বা বিভাগের সংখ্যা ২৯টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের বেশি। যার মধ্যে ৩৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সমন্বিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ এবং ১ জানুয়ারি থেকে সকল ডিসিপ্লিনে ক্লাস শুরু।

শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পর গত ৩৩ বছরে এখানে কোনো ছাত্র সংঘর্ষ, হানাহানি বা রক্তপাত হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই দীর্ঘ সময়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন এবং ঢাকার বাইরে স্থাপত্য ডিসিপ্লিন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন প্রথম চালু হয়। দেশের মধ্যে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় হিসেবে চালু হয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিশ্বমানের আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

গত জানুয়ারি থেকে প্রণীত ওবিই কারিকুলা এবং একই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্সে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণা বরাদ্দ ৫.৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ছাত্ররাজনীতিমুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ৩২টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যার সাথে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, দক্ষতা ও সাংগঠনিক মনোবল অর্জন করে।

গত ৩৩ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটরা দেশে-বিদেশে দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সাথে নানা পেশায় কাজ করছেন। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী আশফাক সালেহিন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ‘পার্টনার ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী সি এম খালেদ সাইফুল্লাহ। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) হিসেবে যোগ দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন মনি মোহন মণ্ডল।

জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনে সহায়তায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ফাইরুজ ফাইজা বিথার। এছাড়াও বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের রয়েছে বিভিন্ন অর্জন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের অধিকতর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন হল তৈরি, প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ, নিয়মিত জাতীয়/আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য গ্রিনহাউস স্থাপন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার লক্ষ্যে আইএসও সার্টিফাইড করা উদ্যোগ, খেলার মাঠের উন্নয়ন, আবাসিক হলসমূহে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব তৈরি, সার্বিক কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে ইন্টারন্যাশনাল হল/ডরমেটরি তৈরি, সুন্দরবনের উপর বিশ্বমানের রিসার্চ করার জন্য যুগোপযোগী সেন্টার তৈরি। এছাড়াও জীববিজ্ঞানভিত্তিক ৭টি বিভাগসমূহের জন্য মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, আরও ৩০০ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৪০% পূরণ, রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার ডেস্ক তৈরি, সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব নির্মাণ, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে এতদঞ্চলের মানুষের অপরিসীম অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য। আমরা সবসময়ই সে বিষয়টি ধারণ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ধারণ করেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্য পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে গড়ে তুলতে ডিজিটালাইজেশনের পথে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ