নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পাঁচটি বিভাগে তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে তৈরি হচ্ছে সেশন জট এবং পাঠদান জটিলতা।
বিভাগগুলো হলো- সমাজ বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ ও সমাজ কর্ম বিভাগ, আইন অনুষদের আইন বিভাগ, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগ।
বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। অথচ নোবিপ্রবির এ সকল বিভাগের কোনোটিতে প্রায় ৭০ অথবা ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকে একজন শিক্ষক। আবার কোনো বিভাগে প্রতি ৫০ অথবা ৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, সমাজ বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চলমান ৬টি ব্যাচের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। যার মাঝে ১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাহিরে রয়েছেন। একই অনুষদের সমাজ কর্ম বিভাগের চলমান পাঁচটি বিভাগের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪জন।
শিক্ষক সংকটের এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হচ্ছে সেশন জট। সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এক সেমিস্টারে একাই একজন শিক্ষককে নিতে হচ্ছে আটটি কোর্সের বেশি। এতে করে শিক্ষকদের ওপর যেমন চাপ পড়ে তেমনি শিক্ষার গুণগত মানও রক্ষা করা যাচ্ছে না। যেখানে সঠিকভাবে বিভাগের সকল ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ১৫ জনের ওপর শিক্ষক প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরীক্ষা চালানো কষ্টকর।
এ ছাড়াও শিক্ষক সংকটে থাকা আইন বিভাগের পাঁচটি বিভাগের জন্য রয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। তাদের মাঝে ১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাহিরে রয়েছেন।
আইন অনুষদের ডিনের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ একটি লম্বা সময়ের প্রসেস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চাহিদার কথা বলা হলেও তারা পর্যাপ্ত নিয়োগ আমাদের দিচ্ছে না। এর ফলে বিভাগগুলোর শিক্ষক সংকট হলেও আমরা পর্যাপ্ত শিক্ষক পাচ্ছি না।
শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগেও রয়েছে তীব্র শিক্ষক সংকট। শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের পাঁচটি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার মাঝে দুজনই শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাহিরে রয়েছেন। একই অনুষদের শিক্ষা বিভাগেও রয়েছে শিক্ষক সংকট। এই বিভাগের ছয়টি চলমান ব্যাচের জন্য রয়েছে মাত্র ৬ জন শিক্ষক।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হওয়া উচিত। তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য এ পরিস্থিতে শিক্ষকরা দ্বিগুণ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করি শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে অতিদ্রুতই বিভাগগুলোর শিক্ষক সংকট দূর হয়ে যাবে।
জানা যায়, শিক্ষক সংকটের কারণে নাজেহাল অবস্থায় বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সবগুলো বিভাগেই তৈরি হচ্ছে সেশন জট। নির্ধারিত সময়েরও ছয় থেকে আট মাস পর শুরু হচ্ছে সেমিস্টার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এভাবে চলতে থাকলে আরো পিছিয়ে পড়বেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্যমতে, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিভাগ চাইলে খণ্ডকালীন শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর নয়া শতাব্দীকে জানান, কোনো বিভাগে শিক্ষক সংকট যদি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে তারা খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসির অনুমোদন লাগবে।
নতুন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য ইউজিসি বরাবর আবেদন করে যাচ্ছে। শীঘ্রই হয়তো ইউজিসির অনুমোদনক্রমে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষক সংকটে নিরুপায় হওয়ার কথা বললেন নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি কমিয়ে দিচ্ছি। ইউজিসি অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এর ফলে চাইলেও নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছি না। তবে বিভাগগুলো চাইলে চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ