ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৭

খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমার এবং পরিবারের উপরে একটা আলাদা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই আর্থিক এই চাপ কমাতে আমি সকালে নাস্তা করা বাদ দিয়েছি এবং বিকেল/সন্ধ্যার নাস্তাও বাদ দিয়েছি। কিছুদিন আগেও দৈনিক ১টি ডিম খাওয়া হতো কিন্তু এখন সপ্তাহজুড়েও ১ হালি ডিম খাওয়া হয় না। অন্যদিকে কমেছে মেসের মিলের মান এবং পরিমাণ। সবমিলিয়ে দূর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। এভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী মো. রাকিবুর রহমান রিফাত।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চাল-ডাল থেকে শুরু করে শাকসবজির প্রত্যেকটি পণ্যের দাম যেনো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। এতে করে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। বাড়ি থেকে স্বল্প টাকা নিয়ে চলতে প্রতিনিয়িত হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

তিতুমীর কলেজের অনার্স প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে মেসে থাকতে আমার ১০ হাজারের মতো খরচ হতো, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য এখান সেই খরচ ১৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মেসের মিলরেট ৪৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার প্রভাব আমার পরিবারের উপর পড়েছে। পূর্বের তুলনায় এখন ৩-৪ হাজার টাকা প্রতি মাসে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।

তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুর রহমান রিফাত বলেন, ২০২৩ এর শুরুর দিকে ৫ হাজার টাকাতেই মাসব্যাপী মেসের খরচাদি চলে যেত। কিন্তু গত কয়েক মাসে তা বেড়ে ৮ হাজারে গিয়ে পৌঁছেছে। চড়া মূল্যের এই বাজারে খরচ কুলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমার এবং পরিবারের উপরে একটা আলাদা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই আর্থিক চাপ কমাতে আমি সকালে নাস্তা করা বাদ দিয়েছি এবং বিকেল/সন্ধ্যার নাস্তাও বাদ দিয়েছি। কিছুদিন আগেও দৈনিক ১টি ডিম খাওয়া হতো কিন্তু এখন সপ্তাহজুড়েও ১ হালি ডিম খাওয়া হয় না। অন্যদিকে কমেছে মেসের মিলের মান এবং পরিমাণ। সবমিলিয়ে দূর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।

তিতুমীর কলেজের অনার্স প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী আনাস রায় বলেন, আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ পরিমাণ খরচ হয়। কারণ, আলু থেকে শুরু করে শাকসবজি এবং মাছ-মাংস সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। আমরা যারা স্টুডেন্ট আমাদের পক্ষে বাইরে থাকাটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে কারণ আমরা বেশিরভাগ পরিবারের উপরে নির্ভর করে চলি। আমাদের মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এই সময়ে আমাদের পরীক্ষা চলমান যার কারণে আমরা বাড়িতেও অবস্থান করতে পারতেছি না। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে মেসে খাবারের মান অনেক কমে গেছে। আমরা এখন শুধু বাঁচার জন্য খাচ্ছি, আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার তার কোনটাই আমাদের খাবারে আর থাকছে না। তাই খাবারের দাম কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কুরবান আলী বলেন, ২০১৯ থেকে ঢাকায় আছি পড়াশোনার তাগিদে। এই তো কিছু দিন আগেও তিন বেলা খাবার খেতাম বেশ স্বাচ্ছন্দে। কিন্তু হঠাৎ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। ইতোমধ্যে সকালের খাবার বাদ দিয়েছি। দুপুরে মাছ বা মুরগির ছোট একটা পিস সাথে পেপে রাতে ডাল সাথে একটা ডিম ভেজে ৩ জন খেতে হয়। সপ্তাহে ৫ দিনই চলে। এভাবে শুক্রবারে দুপুরে ভালো খাবার মানে এক পিসের জায়গায় দুই পিস মুরগির মাংস খাই। খেয়ে না খেয়ে চলছে আমাদের ছাত্রদের জীবন। সারাদেশেই একই অবস্থা তাই বাসা থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ারও কোনো সুযোগ নাই।

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ