ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্ধারিত সময়েই শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়ার আশ্বাস এনসিটিবির

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:০২

নতুন বই বিতরণে গত বছরের আলোচনা-সমালোচনা, কাগজ আমদানি ও মান নিয়ে প্রেস মালিক- শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছাড়িয়ে এবার নির্ধারিত সময়েই ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এনসিটিবির তথ্যমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের ৯ কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানো প্রায় শেষ। সেগুলো উপজেলায় পাঠানোও হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ হবে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। প্রেসে গেলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ এখনো বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পার্সেজ কমিটির মিটিং হলে পাণ্ডুলিপি দ্রুত প্রেসে পৌঁছে যাবে। বই পেতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এ বছর খুব গুরুত্বের সঙ্গে বইয়ের তদারকি করছি। গত বছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছু হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবার কাগজের দামও স্থিতিশীল। আশা করি সঠিক সময়ে বই পৌঁছাবে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার কম ছাপানো হচ্ছে তিন কোটি বই।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রেসে প্রেসে চলছে বোর্ড বই ছাপানোর কাজ। ছাপানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধাইকর্মীরা বই বাঁধাই করে সারি করে সাজিয়ে রাখছেন। ছাপার কাজে প্রস্তুত বড় বড় কাগজের রোল।

মুদ্রণ সমিতি জানিয়েছে, এনসিটিবির তদারকিতে দ্রুত কাজ শেষ করছেন ছাপাখানার মালিকরা। কাগজের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল হওয়ায় এবছর কাগজ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে।

মুদ্রণ মালিক সমিতির সভাপতি রূপালি প্রিন্টার্স অ্যান্ড ম্যাগাজিনের স্বত্বাধিকারী শহিদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘এ বছর বই সময়মতো পৌঁছাবে। গত বছরের মতো বিলম্ব হবে না। প্রেসগুলো ব্যস্ত। কিন্তু নবম শ্রেণির বই নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এই বই সময়মতো পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।’

জনতা প্রেসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আমরা প্রাইমারি স্কুলের যে বইয়ের দায়িত্ব পেয়েছি, সেটার কাজ শেষ। তবে তৃতীয় শ্রেণির খ্রিস্টান ধর্ম ও শিক্ষা এবং হিন্দুধর্মের বই সংশোধনের জন্য নিয়ে গেছে। সপ্তম শ্রেণির তিনটি প্যাকেজ পেয়েছি (এক প্যাকেজে চার লাখ বই থাকে)। সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করে পাঠিয়ে দেবো।’

রেদোয়ানি প্রেসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, নবম শ্রেণির বইয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেরিতে শুরু হলে বইও দেরিতে যাবে। ছোট প্রেসগুলো শর্ত পূরণ করলেও কাজ কম পায়। কিন্তু বড় প্রেসগুলো বেশি কাজ পেলেও তারা যথাসময়ে শেষ করতে পারে না।

আনমন প্রেসের বাঁধাইকর্মী মাসুদ বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির বইয়ের চারটি প্যাকেজের টেন্ডার হয়েছে, কিন্তু এনসিটিবি থেকে এখনো পাণ্ডুলিপি পাঠায়নি। তারা যখন পাঠাবে আমরা কাজ করে দ্রুত জমা দেবো। অনেক সময় তারা প্রেসে পাঠানোর পরে ভুল থাকে। তখন সংশোধন করতে ফেরত নিয়ে যায়। এভাবে মাঝে মধ্যে পৌঁছাতে দেরি হয়।’

নবম শ্রেণির বই সময়মতো পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন রেদোয়ানি প্রেসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নবম শ্রেণির বইয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেরিতে শুরু হলে বইও দেরিতে যাবে। ছোট প্রেসগুলো শর্ত পূরণ করলেও কাজ কম পায়। কিন্তু বড় প্রেসগুলো বেশি কাজ পেলেও তারা যথাসময়ে শেষ করতে পারে না।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এবছর খুব গুরুত্বের সঙ্গে বইয়ের তদারকি করছি। গত বছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছু হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবছর আমি নিজেই ব্যাংকে বলে পেপার মিল মালিকদের লোন পেতে সাহায্য করেছি যেন সহজে কাগজ আমদানি করতে পারে। এবার কাগজের দামও স্থিতিশীল। আশা করি সঠিক সময়ে বই পৌঁছাবে।’

এনসিটিবির শিক্ষাক্রম সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের প্রাইমারির বইয়ের কাজ প্রায় শেষ। নভেম্বরের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কাজও প্রায় শেষ। নতুন কারিকুলামের কারণে সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাস নিয়ে একটু সমস্যা। দ্রুত কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বই নিয়ে একটু শঙ্কা, কারণ বইটি লিখতে দেরি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় পার্সেজ কমিটির মিটিং হয়নি। সেখানে চূড়ান্ত হলে আমরা পাণ্ডুলিপি প্রেসে পাঠিয়ে দেবো।’

জানা যায়, এবছর চারটি শ্রেণিতেই নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আরও দুই শ্রেণিতে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন কারিকুলামের বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে বই তৈরি হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ