পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এক শিক্ষককে হেনস্তা ও গালমন্দের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে ভিডিও ফুটেজটি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে এসে পৌঁছেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল কর্মচারী মো. শামসুল হক ওরফে রাসেল মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে কৃষি অনুষদের সামনে হেনস্তা করেন। এ সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন ওই দুই কর্মকর্তা। একই সাথে তাকে মারধরের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহীন হেসেন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াজকুরুনি তাদের বাধা দেন।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াজকুরুনি এ শিক্ষককে মুঠোফোনে হুমকি দেন। পরবর্তীতে মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডল, মো. ওয়াজকুরুনি ও মো. শামসুল হক ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে পটুয়াখালীর দুমকি থানায় একটি সাধাণন ডায়েরি (জিডি) করেন। উক্ত জিডি প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ভাবে মো. আনেয়ার মন্ডলকে চাপ দিতে থাকেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতেই একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সহযোগী অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডল জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলায় তারা আমাকে মারতে উদ্দত হন। পরবর্তীতে আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে।
শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মো. শামসুল হক (রাসেল) জানান, একাডেমিক ভবনের সামনে এ শিক্ষকের সাথে কোনো ধরনের গালমন্দ বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। আর এ ধরনের কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. আতাউর রহমান বলেন, মো. আনোয়ার মন্ডল অফিসারদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন, পরবর্তীতে ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি একটি জিডিও করেন। সেগুলো মীমাংসিত। তাকে গালমন্দ বা মারতে যাওয়ার কোনো প্রমাণ আছে? এগুলো অতিরঞ্জিত।
সম্প্রতি এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষককে হেনস্তার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মো. শামসুল হক (রাসেল) ও মো. আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সম্প্রতি নিয়মমাফিক দপ্তরে অনুপস্থিত থেকেও একমাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মাস্টাররোলে কর্মরত মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে। যা গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। একই সাথে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের পিও হিসেবে এবার নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদ নেই সেখানে কিভাবে নিয়োগ হয় তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের মহলে রয়েছে একাধিক আলোচনা সমালোচনা।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা, এটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এ ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ