ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাকৃবি লাইব্রেরিয়ানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৪০

লাইব্রেরির বাজেট ব্যবহারে অসংগতি, অ্যাকাডেমিক বইয়ের অপর্যাপ্ততা, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অসংগতি, লাইব্রেরির এসির অচলাবস্থা, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই গণগ্রন্থাগার তালা দেওয়া, লাইব্রেরিতে চাকরি দেওয়ার নামে ৫ জনকে কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলমের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা এসব অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলমের স্বেচ্ছাচারিতা যেন বেড়েই চলেছে।

অভিযোগে জানানো হয়, 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' নির্মাণের কাজ দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। মুজিব শতবষের্ই এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে এবং কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই কাজ শেষ হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

এদিকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে বলা হলেও বরাদ্দের টাকার অসংগতির কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। অথচ একই সময়ে লাইব্রেরির বৈদ্যুতিক, সংস্কার, মেরামত ও লাইব্রেরিয়ানের অফিস কক্ষের আধুনিকায়ন কাজসহ নানা কাজে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি টাকার ওপরে বলে জানান লাইব্রেরির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। লাইব্রেরির এসব কাজের ব্যয় ও কেনাকাটা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে প্রশ্নবিদ্ধ কেনাকাটার ভাউচারে কমিটির অনেকেই স্বাক্ষর করেননি বলেও জানানো হয়।

লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম নান্নু বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে অনুদান পাওয়া ২৫ লাখ টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আরও কিছু বাজেট হলে 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' নির্মাণের কাজ শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আমার রুম ডেকোরেশেনের জন্য। লাইব্রেরির নিচতলায় যে ৪টি এসি পড়ে আছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' নির্মাণ শেষ হলে এসির কার্যক্রম শুরু হবে। লাইব্রেরিতে বই সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি আছে। কমিটির সকল সদস্যের পরমর্শক্রমেই বই সংগ্রহ করা হয়। লাইব্রেরিতে পিওন সংকট হওয়ার কারণে ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদেরকে বেতন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. অলিউল্লাহ বলেন, লাইব্রেরিতে খণ্ডকালীন কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে যেকোনো বিভাগের প্রধান প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বাজেটের আওতায় কন্টেনজেন্সি হিসেবে জনবল রাখতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ২০টি ফ্যান ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে খাইরুল আলম বলেন, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি ফ্যান ক্রয় করা হয়। ফ্যান ক্রয়ের পর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে আইপিএস ক্রয় করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরির রিডিং রুমে ১৫টি মীরা ফ্যান সচল রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, লাইব্রেরিতে তিন তলায় পরিত্যক্ত রুমটি দ্রুত পড়ার উপযুক্ত করা হবে। এতে জায়গার সংকট কমবে। লাইব্রেরির কেন্দ্রীয় এসি পরিবর্তন করা হবে। এজন্য ডিপিপির একটি বাজেট পাশ হয়েছে। খুব দ্রুতই সমস্যাটি সমাধান হবে। অ্যাকাডেমিক বই হিসেবে ই-বুকের আধিক্য বাড়ছে। বইয়ের হার্ডকপি কম পাওয়া যাচ্ছে। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদেরকে ই-বুক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। লাইব্রেরির অসংগতির বিষয়ে কমিটির সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অধিকাংশ বাজেট খরচ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ও হিসাব পর্যালোচনা করে পরবর্তী বাজেট দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য লাইব্রেরি কমিটি থাকে। কিন্তু বিগত ৮ বছরেও লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, সভা না হওয়ার কারণ বলতে পারছি না। তবে লাইব্রেরিয়ান বললে তারিখ নির্ধারণ করে একদিন সভায় লাইব্রেরির বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ