ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাড়ে ৫ বছরেও হয়নি শেকৃবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি

প্রকাশনার সময়: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৫৪

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কচ্ছপ গতিতে চলছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হলেও পেরিয়েছে ৬ বছর। এ সময়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন প্রথম সারির অধিকাংশ নেতা। বিয়ে করে সংসার পেতেছেন অনেকে। একই সাথে কর্মীসংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে শাখাটির কার্যক্রমও। এতে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের অনেকের মাঝেই প্রশ্ন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই যদি এই ইউনিট চালায় তাহলে নতুনরা সুযোগ পাবে কবে?’

২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর এস এম মাসুদুর রহমান মিঠুকে সভাপতি এবং মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে এ কমিটির বর্তমান বয়স প্রায় ৬ বছর। কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই দীর্ঘদিন চলছে শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগ।

এদিকে কমিটি ঘোষণার দুই বছর পর ২২২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তবে সেই কমিটির শতাধিক নেতাকর্মীই বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। কমিটিতে পদে থাকা অনেক নেতাই চাকরিতে যুক্ত হয়ে গেছেন। ২০১৭ সালে ঘোষিত ১৪ সদস্যের কমিটির ১০ জনই এখন চাকরিজীবী এবং বিবাহিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের মধ্যে সহ-সভাপতি গৌতম রায়, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান বাপ্পী, সহ-সভাপতি আবির আহমেদ মিথেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোনিয়া নুসরিন সুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক আজমীর তুলি এবং সহ-সভাপতি আসিফ ইবনে আমেজ মিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সোহেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৈতি দে পূজা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। এদের বেশিরভাগই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার এবং শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন। একই সাথে সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান আলী পলাশসহ এদের সবাই বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন উপভোগ করছেন।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজনেও ভিড়েছেন বিবাহিতদের দলে।

শাখা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি থাকার ফলে অধিকাংশ নেতাই তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা কমে গেছে। এ অবস্থায় দিনকে দিন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে শাখা ছাত্রলীগ।

জানা যায়, ছাত্রলীগের জয়-লেখক কমিটি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত বছরের ২৯ জুন সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়। তবে অজানা কারণে তার আগের রাতে স্থগিত করে দেওয়া হয় সম্মেলনটি। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, উপর মহলের চাপেই সেদিন সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছিল। এতে সদ্য জ্বলে ওঠা নেতাকর্মীদের আশার আলোও নিভে যায় সেদিন। এরপর প্রায় দেড় বছর কেটে গেলেও আর সম্মেলনের ডাক পড়েনি। এতে হতাশ হয়ে পদপ্রার্থী নেতাকর্মীরা পড়ার টেবিলে বসেছেন। রাজনীতির মাঠ ছেড়ে চাকরির পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়েছেন তাদের অনেকে।

এদিকে কাগজে কলমে অর্ধ সহস্রাধিক পদধারী নেতাকর্মী থাকলেও তাদের প্রোগ্রামে পাচ্ছেন না শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম মাসুদুর রহমান মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আগস্টে কোন শোকসভা বা আলোচনা সভারও আয়োজন করতে পারেননি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছে ২২২ জন। এছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল কমিটিতে ১০১ জন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা হল কমিটিতে ৮১ জন, শেরেবাংলা হল কমিটিতে ৮৫জন, কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হল কমিটিতে ৫৩ জন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল কমিটিতে ৪৮ জন নেতাকর্মী রয়েছে। শাখাটির কেন্দ্রীয় ও হল কমিটিতে মোট ৫৯০ জন নেতাকর্মী থাকলেও প্রোগ্রামগুলোতে মাত্র একশ থেকে দেড়শ নেতাকর্মী দেখা যায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার পদ প্রত্যাশীদের অনুসারী বলে জানা যায়।

পদ প্রত্যাশী এক উপ-সম্পাদক বলেন, আগস্ট মাস গেল, তারা (মিঠু-মিজান) কোনো শোকসভা বা আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারল না। ক্যাম্পাসের ও জাতীয় প্রোগ্রামগুলোয় তারা কর্মীদের উপস্থিত করতে পারছে না। প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির ডাকে বড়জোর ৫০ থেকে ৬০ জন বের হয়। বেশিরভাগ কর্মী তো নতুন কমিটির প্রার্থীদের।

এ ইউনিটের কর্মী খরা নিয়ে চিন্তিত দেখা গেছে কৃষকলীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দকেও। সম্প্রতি ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে প্রথম দিকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অতিথিবৃন্দ। পরবর্তীদের কয়েকজন পদ প্রত্যাশী আলাদাভাবে নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত হলে মিলনায়তন স্লোগানে মুখরিত হয়। ২৮ আগস্ট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে কেআইবি ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের যৌথ আয়োজনে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে যেন ২৫ আগস্টের মতো কর্মী সংকট দেখা না দেয়, তাই শুধু মিঠু-মিজানের প্রতি ভরসা না করে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন কৃষকলীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ।

নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, একই কমিটি প্রায় ছয় বছর ধরে আছে। ছয় বছর আগে এক ছেলে যে পদে ছিল সে একই পদে আছে। তার কোনো পদোন্নতি হয়নি। সাংগঠনিক গতিশীলতা না থাকলে কর্মীরা হতাশ হয়। তারা সংগঠন বিমুখ হবে এটাই স্বাভাবিক।

এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার নিতে ঠিকাদারদেরকে লাঞ্ছিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে হলের সামনে দোকান বসানোর চেষ্টা এমনকি সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে।

শেকৃবি ছাত্রলীগের আরেক নেতা বলেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার। সাংগঠনিক গতিশীলতা দরকার। তিনি এক সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই প্রোগ্রামে মিঠু-মিজান দেড় হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তিন-চারশোর বেশি কর্মী মনে হয় ছিল না। এসব নেতৃত্বের দুর্বলতা। নতুন নেতৃত্ব আসলে কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে হবে না। কৌশলী নেতৃত্বে এমনিতেই উপস্থিতি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

নতুন কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা কমিটিগুলো নিয়ে কাজ করছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি শীঘ্রই সব জায়গায় নতুন করে কমিটি দেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ