ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ‘মারধর’ পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতার

প্রকাশনার সময়: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩১ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪১
পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবু বকর। ইনসেটে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা সরকার

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে দোকানদারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। বাকি না দেওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেতা এবং তার অনুসারীরা দুজন দোকানদারকে মারধর করেছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মাসুদ রানা সরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী দোকানদারদের নাম নাম আবু বকর (৩৫) এবং আরিফুর রহমান (৩০)। এর মধ্যে আবু বকরকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তারা দুইজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফরিদা টাওয়ারের নিচে স্টার ক্যাফের মালিক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেল চারটার দিকে স্টার ক্যাফেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র দোকানে এসে কিছু খাবার কিনে। দোকানের মালিক আবু বকর ওই ছাত্রের কাছে টাকা চাইলে বলে, মাসুদ ভাই এসে দিয়ে যাবে। আবু বকর তখন ওই ছাত্রকে বাকি দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুক্ষণ পর দোকানে ৫-৬ জন ছাত্র এসে দোকানে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং যাওয়ার সময় বলে মাসুদ ভাই টাকা দেবে। তখন দোকানের আরেক মালিক আরিফের সাথে টাকার জন্য ছাত্রদের কথাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে ছাত্ররা আরিফের গায়ে হাত তোলে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে মাসুদ রানা সরকার সহ ১০-১৫ জন ছাত্র হাতে করে লাঠি, বাঁশ, রড নিয়ে এসে দোকানে থাকা আরিফ, আবু রকর এবং ছোট ভাই জাকারিয়াকে মারধর করে। এসময় তারা দোকানে ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করে। এরপর আশেপাশের মানুষ ছুটে আসলে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে চলে যায়। পরে দোকানদাররা আবু বকর এবং আরিফকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী দোকানদার আবু বকর জানান, মাসুদের নাম ১২০০ টাকার মতো বাকি এর মধ্যে হয়ে গেছে। প্রত্যেক দিন উনার ছেলেরা এসে বাকি খায় এবং যাওয়ার সময় বলে মাসুদ ভাই দিয়ে যাবে। গতকালকে উনার একজন ছেলে আসলে আমি বাকি দিবো না বলে জানাই। এর কিছুক্ষণ পরই মাসুদের ছেলেরা এসে আমাদের ওপর হামলা করেন।

দোকানের ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বলেন, মাসুদের ছেলেরা কয়েকদিন পরপরই বাকির জন্য ঝামেলা করেন। গতকালকে আমরা বাকি দিতে চাইনি আর এতেই আমাদের অপরাধ হয়েছে। আমরা তিনজন মানুষ মার খেয়েছি এবার দোকানেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা সরকার ঘটনাটির সাথে জড়িত নন বলে দাবি করে বলেন, ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি রুমে ছিলাম। বিকেলে আমি শুনেছি ওই দোকানে আমাদের ক্যাম্পাসের কয়েকজন ছাত্র বার্গার খায়, এরপর ওদের পেটে সমস্যা হয়। বিষয়টা তারা দোকানদারকে বলতে গেলে ওই দোকানদার অর্থনীতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের প্রান্ত নামের এক ছাত্রকে আটকে রেখে মারধর করেন। এরপর কিছু ছাত্র প্রান্তকে উদ্ধার করতে নাকি দোকানে গেছেন। পরে আমি ঘটনাটা দেখার জন্য গেটের দিকে যাই। দোকানদারকে কারা মেরেছে সেটা আমার জানা নাই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আমার কোনো নির্বাহী পদ নাই, তাই আমার কোনো অনুসারীও এখন নাই। আর আমার নামে বাকি খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। দোকানদারই বা আমার নামে বাকি দিতে যাবেন কেন।

এ বিষয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমি ঘটনাটা কিছুটা শুনেছি। এটা যেহেতু ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা তাই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই। যারা ভুক্তভোগী তারা যা করার করুক, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু দোকানদার এবং শিক্ষার্থী কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা দুই পক্ষের সাথে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি দোকানের দুইজন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেটা শুনেছি। কিন্তু আমরা কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ