ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
রাবি শাখা ছাত্রলীগ

স্থানীয়দের মধ্যে আটকে আছে নেতৃত্ব, আগ্রহ হারাচ্ছে বহিরাগতরা

প্রকাশনার সময়: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৫৩

দীর্ঘ সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। সম্মেলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। নিয়মিত মিছিল-মিটিং, সভা করছেন পদ প্রত্যাশীরা। তবে এক অলিখিত নিয়মে আটকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি। গত প্রায় দুই দশক ধরে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ দখল করে আছেন স্থানীয় নেতারা। ফলে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে বাইরে থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫টি কমিটি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কমিটিতেই একজন রাজশাহীর স্থানীয় এবং একজনকে রাজশাহীর বাইরে থেকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হতো। যারা দক্ষতার সঙ্গে ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ শাখার নেতৃত্ব ক্রমেই রাজশাহী বিভাগেই আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া গত প্রায় দুই যুগে রাবি ছাত্রলীগের তিনটি কমিটির শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার প্রার্থীরা।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর বাড়ি নগরীর নওহাটা এলাকায়।

এরআগে, গত ২০১৫ সালের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক কাজলার খালিদ হাসান বিপ্লব। ২০১৩ সালের কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান রানার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাগমারা ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের বাড়ি বাঘা উপজেলায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক পদপ্রার্থী জানান, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কেবল রাজশাহীর স্থানীয়রাই আসে। বাইরের যোগ্য প্রার্থী থাকলেও তারা মূল্যায়িত হচ্ছে না। অথচ সংগঠনের জন্য তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। তারপরেও কেবল স্থানীয়দেরই মূল্যায়ণ যেন একটি অলিখিত রীতিতে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রনেতারা অভিযোগ করে বলেন, নিজের প্রয়োজনে স্থানীয় নেতা ক্যাম্পাস নেতৃত্বকে হাতে রাখে। স্থানীয় নেতা ক্যাম্পাস কমিটিকে একটি পকেট কমিটি তৈরি করেছে। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান নতুন সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য সাকিবুল ইসলাম বাকি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল, সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ শুভ ও ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ।

এ ছাড়া রাজশাহীর বাইরে থেকে আলোচনায় রয়েছে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মেজবাহ উল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মামুন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব।

এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, বিগত কয়েকটি কমিটিতে রাজশাহী শহর বা এর আশপাশের ছাত্র নেতারা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আগে যোগ্যতা দেখে প্রাধান্য দেওয়া হতো। এখন সেই প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত হয় না। এখন উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। এখানে লোকাল পাওয়ার স্ট্রাকচারের সংযোগে তাদেরকেও সন্তুষ্টের একটা ব্যাপার থাকে। তবে এতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় না।

এক প্রশ্নে জাবাবে তিনি বলেন, রাজশাহীর বাইরের কেউ ছাত্রলীগের প্রতি যতই ডেডিকেটেট বা যোগ্যই হোক না কেন, সে জানে এখানে পদে আসতে পারবে না। তাহলে কেন সে চেষ্টা করবে? কর্মী হওয়ার জন্য তো কেউ দল করবে না। যে দল করে তার একটা স্বপ্ন থাকে, সে একদিন নেতা হবে, এমপি হবে, মন্ত্রী হবে। এটা একটি লজিক্যাল প্রত্যাশা। কাজেই সে রাজশাহীর বাইরে হওয়ায় যে একটা ভালো পদ পাবে না তাহলে সে কেন রাজনীতি করবে?

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এই ডিন আরও বলেন, এখানে যোগ্যতা না দেখে স্থানীয়টাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। আমার মনে হয় এই জায়গায় একটু ছাড় দেওয়া দরকার। কোনো স্থান বিবেচনা না করে যোগ্যতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে যে ধারণ করে এবং সে যেন কোনো অনুপ্রবেশকারী না হয়ে থাকে, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়ে থাকে এবং সকল ছাত্রের প্রতিনিধিত্ব করবে এমন কাউকেই আমরা নেতা হিসেবে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এখন এককেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। একজন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো নেতা নির্বাচন করে দিচ্ছেন। অথচ এটি তো হওয়ার কথা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা নির্বাচন করবে এখানকার নেতা-কর্মীরা। একই সাথে সাবেক এবং বর্তমান নেতাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেওয়ার একটা বিষয় আছে। সেটিও করা হচ্ছে না। আবার এই অঞ্চলের বাইরেও বিগত কয়েক বছর ধরে নেতা হতে দেখা যায় না। আগে দুইজন নেতা হলে একজন স্থানীয় এবং আরেকজন বাইরের হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রই বাইরে থেকে আসে। তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন যিনি এই বাইরে থেকে এসে নির্বাচিত হয়েছেন।

আবার স্থানীয় সমস্যাগুলো স্থানীয় নেতা দেখতে পারবেন। একই সাথে নেতা নির্বাচন করতে হবে সাহসী এবং রাজনীতি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখেন এমন কাউকে। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, এখানে স্থানীয় বা বাইরের বলে কোনো কথা নেই। মাঠ পর্যায়ে যারা এখন পর্যন্ত টিকে আছে তারা তাদের যোগ্যতা দিয়েই টিকে আছে। যারা এই পদগুলোতে দায়িত্বে আসে তাদের যোগ্যতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর চেতনা, দলের প্রতি ত্যাগ দেখেই কিন্তু তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়। যারা বর্তমান দায়িত্বে আছে তাদের দ্বারা যে ছাত্রলীগ উপকৃত হয়নি বা বাইরের যারা আছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কিন্তু হয়নি। তাই আমি মনে করি, এখানে স্থানীয় বা বাইরের বলে কিছু নেই যারা যোগ্য তাদেরকেই এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু গণমাধ্যমকে বলেন, সামনের জাতীয় নির্বাচনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় আমরা যোগ্য ও ত্যাগীদের প্রাধান্য দেব। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংগঠনে তার কতটুকু ভূমিকা ছিল সেটাই দেখা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ