ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছাত্রলীগের মারধর, বিচার না পেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাবি শিক্ষার্থী

প্রকাশনার সময়: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ২০:১৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শের–ই–বাংলা বাংলা ফজলুল হক হলে গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কারও কাছে ঘটনা তদন্তে কোনো সাড়া না পেয়ে ভুক্তভোগী নেতা আজ শুক্রবার নিজের বাড়ি চলে গেছেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার নাম নজরুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শের–ই–বাংলা ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল-আমিন ও বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস।

ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ১ আগস্ট রাতে শের–ই–বাংলা হলের রিডিংরুমের পাশে আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল-আমিন উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। এ সময় তাকে কথা বলতে নিষেধ করেন তিনি। একপর্যায়ে আলামিন তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসকে ডেকে তিনি শের–ই–বাংলা হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে ভুক্তভোগীকে প্রচণ্ড মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে কান ফেটে রক্ত বের হয়। এই অবস্থায় ভুক্তভোগী কোথাও অভিযোগ দিলে তারা আবার মারধরের হুমকি দেয়। এছাড়া তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় এবং ডান কানের শ্রবণ অনুভূতি নষ্ট হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন।

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রিডিংরুমের পাশে আল-আমিনকে উচ্চস্বরে কথা বলতে নিষেধ করায় তিনি আমার সঙ্গে তর্কে জড়ান। পরে বঙ্গবন্ধু হলের নেতা আলফাত সায়েমকে ডেকে এনে আমাকে শের–ই–বাংলা হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে আমার কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এ ঘটনায় আমি কোথাও অভিযোগ দিলে বা কাউকে জানালে আবার মারধর করবে বলে হুমকি দেন তাঁরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রক্টর দপ্তর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কারো কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে আজ বাড়ি চলে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে নির্যাতনের স্বীকার হতে হবে ভাবতে পারিনি।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সুষ্ঠু বিচার করে তাহলে তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন বলেন, ‘সেদিন আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে জেমস ভাই ও প্রভোস্ট স্যার মিলে সমাধান করে দিয়েছেন। এখন তৃতীয় কোনো পক্ষের প্ররোচনায় সহানুভূতির জন্য অভিযোগটি করেছে।’

অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম জেমস। তিনি বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি জড়িত নয়। অভিযোগকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পরে বিষয়টি জানতে পারলাম। কে বা কারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, সেটিও দেখার বিষয়।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাঁর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেহেতু হলের ভেতরের ঘটনা, তাই প্রাধ্যক্ষ বরাবর তাঁকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ওই হলের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান করতে আলফাত সায়েম জেমস সেখানে গিয়েছিলেন। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন বলে শুনেছেন।’

প্রাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। পরে আমি দুই পক্ষকেই ডেকে বিষয়টি সমাধান করার পরও ভুক্তভোগী নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে আমাকেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে হলের দুইজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাল তাদেরকে চিঠি ইস্যু করা হবে।’

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ