ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেকৃবিতে ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’ প্রকল্পের উদ্বোধন

প্রকাশনার সময়: ২২ জুলাই ২০২৩, ২০:৫০ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ২০:৫২

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্লাক সোলজার ফ্লাই এর লার্ভা উৎপাদন এবং প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ-মুরগির খাবার হিসেবে লার্ভার ব্যবহার’ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।

শনিবার (২২ জুলাই) এএসভিএম অনুষদের সেমিনার রুমে অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়াগেনিয়েন ইউনির্ভারসিটি অ্যান্ড রিসার্চের কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রজেক্টটির কি পারসন হিসেবে রয়েছেন প্রধান সমন্বয়ক ও প্রাণী পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. মো. মোফাজ্জল হোসাইন, কন্ট্রাক্ট ম্যানেজার ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, জাতিসংঘের এফএও-এর প্রতিনিধি পেড্রো এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ফিড মিলের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ।

এ সময় আলোচকরা উল্লেখ করেন, রাজধানীতে কাঁচাবাজারে প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয় তার প্রায় ৭০ ভাগই খাদ্য সম্পর্কিত ও কৃষিপণ্যজাত বর্জ্য। তাছাড়া শহর এলাকায় বাসা-বাড়ি ও হোটেল থেকেও জৈব বর্জ্য তৈরি হয়। এ সকল বর্জ্যের একটি অংশ রাস্তার উপর বা রাস্তার পাশে অননুমোদিতভাবে গড়ে উঠা ডাস্টবিনে পড়ে থাকে। শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় প্রতিদিন ৬-৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। আবার বিভিন্ন তথ্য মতে তা প্রায় ১১ হাজার টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সকল বর্জ্যে প্রায় ৭০ ভাগের অধিকই হচ্ছে জৈব বর্জ্য। ঢাকার এ সকল বর্জ্যের প্রায় অর্ধেকই ফেলা হচ্ছে ল্যান্ডফিলে বাকিটা থাকছে ব্যবস্থাপনার বাইরে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটিতে কোন ল্যান্ডফিল না থাকায় এ সকল বর্জ্য যাচ্ছে সড়কের দুপাশে, নদী ও খালে ।

এ সকল জৈব বর্জ্যের প্রায় ৮০ ভাগই পুনঃচক্রায়নযোগ্য। এসব বর্জ্য থেকে জ্বালানি, বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ, জৈব সার ও মাছ-মুরগির খাদ্য তৈরি করা সম্ভব। অথচ কাঁচাবাজারে এসকল বর্জ্যের তেমন কোন ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না।

তারা আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে মাছ ও মুরগির খাদ্যের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মুরগির মাংস ও মাছের দামও দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই জৈব বর্জ্য ব্যবহার করে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মাছ-মুরগির খাদ্যের জন্য প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হয়। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হয়। জৈব বর্জ্য থেকে লার্ভা উৎপন্ন করে এবং এ লার্ভা দিয়ে মুরগির খাদ্য তৈরি করে সয়াবিন মিলের উপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং মাছ-মুরগির খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।

ব্লাক সোলজার ফ্লাই-এর লার্ভা একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, যা মাছ-মুরগির রেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এদেশে এখনো পর্যন্ত মাছির লার্ভা উৎপাদন করে তা দিয়ে মুরগির রেশন তৈরির জন্য বাণিজ্যিক পর্যায়ে কোন ফিড মিল চালু হয়নি। তাই এ বিষয়ে উদ্যোক্তাসহ সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা।

আলোচনায় শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, পৃথিবীতে কার্বনের দূষন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সাসটেইনে করা কঠিন। কার্বনের দরুন পৃথিবীর তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমরা গত কয়েক বছর ধরে উপলব্ধি করছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জৈব বর্জ্য ব্যাবহার করে দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব যা পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলবে। তবে প্রকল্পের মাধ্যমে যত কম দামে নিরাপদ মাছ-মাংসের খাবার উৎপাদন করা যায় তা বের করে আনতে হবে।

এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক কেবিএম সাইফুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই ব্লাক সোলজার ফ্লাই কেনাবেচা হচ্ছে এবং মাছ-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যাবহৃত হচ্ছে। আমরা পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে ব্লাক সোলজার ফ্লাই লালনপালন এবং মেটিং করে পোল্ট্রিকে খাবার হিসেবে ব্যাবহার করে পুষ্টিগুণ বের করে ফলাফল বের করেছি। পোল্ট্রি পালনের উচ্ছিষ্টাংশ পুনরায় রিসাইকেল করে ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ করা যাবে কিনা তার জন্যে বিস্তার গবেষণার প্রয়োজন।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ