ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুন ২০২৩, ১৮:২০

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বাজেট পেয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা বেশি।

২৩ মে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থ ও হিসাব বিভাগ, পরিচালক (অতিরিক্ত) ড. আবু তাহের কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রদানকৃত অনুদানের (বিমক অনুদান) পরিমাণ ও প্রায় ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা বাড়ায় মোট বাজেট ৫ কোটি ৭২ টাকা বেড়েছে।

মোট বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বেশ কিছু খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তার মধ্যে সব থেকে বেশি বরাদ্দ বেড়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন খাতে যা ২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ভাতাদি বাবদ সহায়তা ২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মোট পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তা ২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, মোট গবেষণা অনুদানের মধ্যে গবেষণা (নিয়মিত) খাতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ টাকা যেখানে শিক্ষকরা গবেষণা করতে পারবেন এবং গবেষণা (বিশেষ) খাতে বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা যেখানে শিক্ষকদের পাশাপাশি গবেষণার সুযোগ পাবেন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ছিল ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা যা চলতি বছরে হয়েছে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে বিগত অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রারম্ভিক স্থিতি ৮৭ লাখ টাকা থাকলেও চলতি অর্থবছরে নেই কোনো প্রারম্ভিক স্থিতি।

এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় গবেষণা খাতে তুলনামূলক কম বাজেট পেয়েছে বশেমুরবিপ্রবি। এর কারণ হিসেবে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট শাখা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে কোনো নীতিমালা থাকায় গবেষণা খাত থেকে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে না।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সালেহ আহম্মেদ বলেন, গবেষণা খাতে যতটা বরাদ্দ লাগবে তার থেকে কম বরাদ্দ দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। একটা জার্নাল নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কোয়ালিটি লাগে সেটা নাই। গবেষণা খাতে ভালো ফলাফল পেতে হলে যূতসই ভালো মানের গবেষণা সেটআপ করতে হবে, গবেষণা বরাদ্দ দিতে হবে ও পর্যাপ্ত মনিটরিং করতে হবে।

বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. মোবারক হোসেন বলেন, বাজেট খুব বেশি না, আমরা চেষ্টা করছি বাজেট বাড়াতে।

গবেষণা খাতে আশানুরূপ ফল না পাওয়ার বিষয়ে বলেন, গবেষণা তো করে না শিক্ষকরা। আমরা বাজেট বাড়াতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইউজিসি বলছে কয়েকবছর যাবত কোনো গবেষণা হয় না, টাকা ব্যাক করে। গত বছর টাকা ফেরত গেছে গবেষণা খাতের। তাই টাকা কমে গেছে। এছাড়াও উদ্ভাবন খাতে এই সামান্য বরাদ্দ যথেষ্ট না।

আশানুরূপ বাজেট না পাওয়ায় তিনি বলেন, এই বাজেট যথেষ্ট নয়। এটা হওয়ার কথা ছিল একশ কোটি টাকার বেশি। এখানে যে অবস্থা তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ছিল ৩২ কোটি টাকা। এখন তো আয় বলতে কিছুই নেই।

তিনি আরও বলেন, বাজেট বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইউজিসি আস্তে আস্তে বাড়ায়, চট করে তো বাজেট বাজায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বাজেট কমায় দিছে, কারণ গভর্নমেন্টের কাছে টাকা নেই।

বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব গবেষণা খাতে আশানুরূপ কম বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, গবেষণা করে রিটার্ন জমা দেওয়ার পর তা পাবলিশ করতে হয়, আর্টিকেল পাবলিশ না হলে এটা হয় না এবং এটা করতে সময়ও লাগে। তা ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বিভাগে ৩০/৪০ জন করে শিক্ষক কিন্তু আমাদের অনেক কম। আমাদের শিক্ষকরা একগাদা ক্লাস নেয়, ক্লাস নিতে নিতে তারা হাঁপিয়ে ওঠে, তার মধ্যে থেকে তাদের গবেষণার জন্য সময় বের করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক কম, ল্যাব ডেভেলপড না, কম্পিউটার সংখ্যাও কম। সুতরাং এটা মনে রাখতে হবে যে ১২ বছর বয়সের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ঢাকা , রাজশাহী, বুয়েটের মতো আশা করা যায় না।

এদিকে, ইউজিসির অনুসন্ধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের অর্থ ব্যয়ে প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কোনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্য একিউএম মাহবুব বলেন, এটা সব বিশ্ববিদ্যালয় কম বেশি হয়েছে। এটা কাজ হয়েছে, খরচ হয়েছে। সাধারণত বাজেট এক্টিভ করলে কিন্তু আপত্তি হয়। যেমন প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার লস গেছে কারণ তেলের দাম বাড়ছে। আমরা টাকা চেয়ে পাই না, আমাদের ইউজিসি দেয় না। সুতরাং প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি আপত্তি আছে, এটা মন্ত্রণালয়েও আছে।

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ