ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভিন্ন পদে নিয়োগ সংক্রান্ত একের পর এক অডিও ফাঁস হচ্ছে। আর এসবেই মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এসব আমলে নেই না। এগুলো আমার রুচিতে বাধে। যারা এসব করছে আল্লাহ তাদের ঈমান দিন৷’ আমিন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত অন্তত ১৪টি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ সপ্তাহেই ফাঁস হয় ৪টি অডিও। এসব অডিওতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে শোনা যায়। তবে অডিওতে অন্য প্রান্তের কথা শোনা যায়নি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৩ জুন) ‘দরবেশ সালাম’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের অডিও ভাইরাল হয়। অডিওতে ড্রাইভার নিয়োগের বিষয়ে নজরুল নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে শোনা যায়।
১১ জুন ‘দরবেশ সালাম’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ফাঁস হওয়া অডিওতে উপাচার্যকে জুবায়ের নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর বিষয়ে কারো সাথে কথা বলতে শোনা যায়। ওই চাকরিপ্রার্থীকে আবেদন করার পর উপাচার্যের সাথে দেখা করতে বলেন বলে শোনা যায়।
১০ জুন ‘রক সালাম’ নামের আইডি থেকে ফাঁস হওয়া দুইটি অডিওতে উপাচার্যকে মেডিকেলে নিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
৯ জুন একই আইডি থেকে ফাঁস হওয়া অডিওতে উপাচার্য ফাইন আর্টস ও মার্কেটিং বিভাগের নিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন। অডিওতে অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে উপাচার্য বলেন, ‘সোজা কথা, আমি আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কাউকে নিয়োগ দিব না।’
এছাড়াও ‘ফারাহ জেবিন, আল বিদা, মিসেস সালাম’ থেকে বিভিন্ন সময়ে দশটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের প্রথম অডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
এছাড়াও, এই ঘটনায় উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে তিনদিন আন্দোলন করেন চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের অপসারণ দাবি ও তার ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড মাইকে বাজিয়ে আন্দোলন করেন তারা।
এদিকে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডিভাইসের খোঁজে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়াও বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে খতিয়ে দেখা ও এসবের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও আইসিটি সেলের সিস্টেম এনালিস্ট মো. নাঈম মোরশেদকে সদস্য সচিব করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আইআইই আর-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রহমান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ও আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাদেক আলী।
এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখনো সেভাবে কাজ শুরু করতে পারিনি। খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবো।
এদিকে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদয়ালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে দাবি করে পৃথক ভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক সমিতি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। এছাড়াও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। তবুও এ ঘটনার দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, এসব অডিও ফাঁসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা সরকারকে হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি প্রেরণ করেছি। আমরা শিক্ষক হিসেবে তো কিছু করতে পারি না। সর্বোচ্চ তাকে বা সরকারকে অবহিত করতে পারি।
এদিকে, একের পর এক অডিও ভাইরালের মাঝেও নিয়োগ সংক্রান্ত বোর্ড চলমান রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সোমবার (১২ জুন) নিয়োগ বোর্ড চালু হয়। সোম ও মঙ্গলবার চারটি প্রশাসনিক পদের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১২ জুন) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি পদের বিপরীতে ১৩২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও একজন সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদের বিপরীতে ৩৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৩ জুন) প্লাম্বার পদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি পদের বিপরীতে সাত জন চাকরি প্রত্যাশী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও একজন ইলেকট্রিশিয়ান পদের বিপরীতে অংশগ্রহণ করেন দশজন চাকরি প্রত্যাশী।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ