ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেমন কাটলো নজরুলিয়ানদের ঈদ

প্রকাশনার সময়: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৪৪ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৮

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’ কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী এই ঈদের গানটির মতই যেন নজরুলীয়ানদের ঈদ অনুভূতি মিলেমিশে একাকার। ঈদ এলেই তোরজোড় শুধু হয়ে যায় চোখ-মুখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে নাড়িরটানে বাড়ি ফেরার। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিটের ঝামেলা মিটিয়ে একদিনের জন্য হলেও পরিবারের সাথে ঈদ করতে যাওয়ার মধ্যে যে কি আনন্দ; তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। অনেকদিন পর বাড়ি ফেরার এই অনুভূতি, প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার মূহুর্তগুলো প্রতিটি নজরুলীয়ানদের জীবনেই যেন তৈরি করে নতুন নতুন গল্প। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (নজরুলিয়ানদের) ঈদ কেমন কাটলো তা জেনে নেওয়া যাক। তাদের ঈদ আনন্দের অনুভূতি তুলে ধরেছেন ‘দৈনিক নয়া শতাব্দী’র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন

পরস্পরের সৌহার্দ্য বন্ধনে বর্ণিল হোক প্রত্যকের ইদ রামাদান পালনের পর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের একরাশ বারতা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদ গ্রামের নানুবাড়িতে উদযাপন করেছি। ছায়াঘেরা, সুশীতল পরিবেশে পরিবারের সবার সাথে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া ভীষণ উপভোগ করেছি। পাশাপাশি যেহেতু আমি একাধিক সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক, সে হিসেবে আশেপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে ঈদের আগেই নিজ সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছি। যা আমার ঈদ আনন্দকে বিশেষায়িত করেছে। পরস্পরের সৌহার্দ্য বন্ধনে বর্ণিল হোক প্রত্যকের ঈদ আনন্দ এই প্রত্যাশায়।

রাফিয়া ইসলাম ভাবনা, বিভাগ: ফোকলোর, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮ (স্নাতক)

বাড়ির প্রতি তীব্র আকুলতা মিটিয়েছে

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ি। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বেশ কয়েকটি দিন অস্বস্তিতে কাটে। ঈদের অব্যবহিত পূর্বে এবং পরের দিনগুলো ভালো সময় কেটেছে। এ সময় বিদ্যুৎ এবং পরিবেশ দুটোই অনুকূলে ছিল। অনেকদিন পর স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। বন্ধুদের নিয়ে ইফতার মাহফিলে পুরনো দিনগুলো ফিরে পেয়েছিলাম। চাঁন রাতে আতশবাজি ফুটিয়ে ঈদ আনন্দ শুরু হয়। প্রতি ঈদের নিয়মিত আয়োজন সিনিয়র বনাম জুনিয়র ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছি। সবমিলিয়ে প্রায় ২০ দিন পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েছি যা বাড়ির প্রতি তীব্র আকুলতা মিটিয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান, বিভাগ:লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ:২০২১-২২( (স্নাতকোত্তর)

এবারের ঈদটা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আলাদা দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর প্রতিবছরের চেয়ে এবারের ঈদটা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আলাদা। হাসি,আনন্দ আর অনাবিল সুখের সাথে যুক্ত হয়েছিল দায়িত্ববোধ। নতুন পরিবেশ, নতুন পরিবার সবাই এতো আপন ছিল। একটিবারও মনে হয়নি আমি বাড়ির পুত্রবধূ। কাকডাকা ভোরে মা, কাকিমার সাথে ঘুম থেকে উঠে হাতে হাতে কাজ করে বিচ্ছুবাহিনী আর বড়দের সাথে নাস্তা খাওয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করি। এরপর ছেলেরা ঈদের নামাজ থেকে আসলে সালামি দেওয়া আর নেওয়া ছিল বাড়তি এক আনন্দ। পরিবার পরিজন, আত্নীয়-স্বজন সকলে মিলে প্রতিটি ঈদ যেন ভাগাভাগি করে কাটাতে পারে এই প্রার্থনা করি। ঈদের মতোই সকলের জীবন হোক সুন্দর ও দীপ্তিময়। সবাইকে ঈদ মোবারক।

মাহবুবা মারিয়া, বিভাগ:ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), সেশন: ২০১৭-১৮ (স্নাতক)

পড়াশোনা এবং কর্মজীবনের প্রবেশের চাপে সেই আমেজটা আর পাইনা ছোট থেকে শহরে পড়াশোনার সুবাদে সব সময় অপেক্ষা করতে হতো বাড়িতে যাবার বিশেষ ছুটির দিনগুলোর জন্যে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঈদের দুই লম্বা ছুটি। আর এই ছুটিকে ঘিরে চলতো নানা প্রস্তুতি। পুরো ছুটিতে কি করবো তার রুটিনও করে ফেলতাম অগ্রীম। কার কার বাড়ি বেড়াতে যাবো, কই কই ঘুরতে যাবো। দেখা যেত একমাস থেকেই ব্যাগ গুচাচ্ছি। বর্তমানে পড়াশোনা এবং কর্মজীবনের প্রবেশের চাপে সেই আমেজটা আর পাইনা। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই বিয়ে, বউ বাচ্চা নিয়ে ঈদসহ ঈদ পরর্বতী নানা আয়োজনে ব্যস্ত। যার কারণে তাদের সাথে আর আড্ডার সুযোগ তেমন হয়নি। দেখা গেছে ছুটির পুরো সময় টিভিতে নাটক, সিনেমা দেখে কাটাতে হয়েছে।

রাতুল মুন্সী, নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ:২০১৭-১৮ (স্নাতকোত্তর)

এমন দিন বারবার ফিরে আসুক ক্যাম্পাস থেকে গ্রামে ঈদ করতে আসাটা বসন্তে নতুন ফুল ফোটার আনন্দের মতই অতুলনীয়। গ্রামে ছোট-বড় সবার সাথে আনন্দঘন দিন অতিবাহিত করেছি এ কয়েকদিন। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের যারা সেচ্ছাসেবক আছে তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হয়। গ্রাদের মানুষদের জন্য কাজ করা হয় এই সময়। সবার সাথে যখন সাক্ষাৎ হয়, মনে হয় এনারাই তো আমাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে। আমারও ঠিক তেমনি, গ্রামের ক্লাবগুলোর সাথে কাজ করেছি। পূর্ণমিলনীতে একগুচ্ছ মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি, সেচ্ছাসেবক হিসেবে সকলের সমীহ পেয়েছি। সবমিলিয়ে বলতে চাই, এমন দিন বারবার ফিরে আসুক। এই ঈদের মত প্রতিটি ঈদ হয়ে উঠুক সম্পৃতীর সেতুবন্ধন।

রবিউল ইসলাম, বিভাগ: স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৮-১৯ (স্নাতক)

যে হাসিটা দেখেছি তা সত্যি খুব আনন্দের এবং প্রশান্তির ঈদ আমার কাছে সবসময় খুশি ও আনন্দের একটা দিন। সারা বছরের মধ্যে একমাত্র ঈদের দিনই আত্মীয়, বন্ধুসহ পরিবারে সকল সদস্যরা একসাথে হতে পারি। প্রতিবারের মতো এবারও সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বাসা থেকে বের হয়ে যাই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে কিন্তু এবার ঈদটা ছিল আমার কাছে সব থেকে আলাদা। কারণ এবারের ঈদের আমরা বন্ধুরা মিলে ঘোরাঘুরি করা জন্য যাই একটা এতিমখানা। সেখানে শিশুদের সাথে সারাদিন অনেক আনন্দ-মজা করি এবং দিনশেষে ফিরে আসার সময় শিশুদের মুখে আমরা যে হাসিটা দেখেছি তা সত্যি খুব আনন্দের এবং প্রশান্তির।

পার্থ সাহা, বিভাগ : মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৯-২০ (স্নাতক)

অন্য ধর্মের হলেও ঈদকে আমার নিজেদের উৎসবই লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এটাই আমার প্রথম ঈদ। যদিও আমি অন্য ধর্মের মানুষ। তাই বলে যে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবো এমন না। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নিঃসন্দেহে শহরের থেকে গ্রামে ঈদ উদযাপন করা সবচেয়ে বেশি আনন্দদায়ক। অন্য ধর্মের হলেও ঈদকে আমার নিজেদের উৎসবই লাগে। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা ধর্মকে। সম্মান করি তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে। ঈদের আগের দিন রাতে আমার ভার্সিটির বড় আপু, আমাদের ক্লাসমেট, ব্যাচমেটের সবার কাছ থেকে সালামি নামের ভালোবাসা পাওয়ার এই প্রথম সুযোগ হয়। ঈদের দিন সবার কাছ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পেয়ে আমি খুশিতে আপ্লুত ছিলাম। বান্ধবীদের বাড়িতে দাওয়াত, বিকালে শাড়ি পড়ে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, অনেক দিন পরে পরিচিত মুখগুলোকে একসাথে দেখা সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। আসলে ইদ মানেই সবার মাঝেই আনন্দের ছড়াছড়ি।

শ্রাবনী রানী, বিভাগ: বাংলা, শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২ (স্নাতক)

ছেলেটির খুশি দেখে ভালো লাগলো ভার্সিটিতে চাঞ্জ পাওয়ার পর এটাই প্রথম ঈদ। এবার একটি ভিন্নরকম ঈদ কাটলো। ঈদের দিন সকালটা শুরু হয় নামাজ দিয়ে। নামাজ শেষে বাড়ি এসে পরিবারের সবাই একসাথে বসে বিভিন্ন রকম মজাদার খাবার খাওয়া, অনেকদিন পর অন্যরকম এক অনুভূতি। ঈদের দিন বিকেলে পার্কে ঘুরতে গিয়ে দেখি একটি ৮-৯ বছরের ছেলে হারিয়ে গেছে। কান্না করছিলো খুব। এমন একটি খুশির দিনে শিশুমনে বিচ্ছিন্নতার গভীর দুঃখবোধ যেন কোনভাবেই স্পর্শ না করে তাই নিজেই ওকে ওর বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসলাম। ছেলেটির খুশি দেখে ভালো লাগলো। নিজের পোষা পাখি, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভিন্নরকম এই ঈদ কেটেছে আনন্দের সাথে।

সাইদ হোসেন নাঈম, বিভাগ: ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২ (স্নাতক)

এক টাকা, দুই টাকার কচকচে নোটের সালামির ঘ্রাণ আর পাই না এখন ঈদের আনন্দ আগের মতো এতো বেশি না। যত বড় হচ্ছি, আনন্দ কমছে। এক টাকা, দুই টাকার কচকচে নোটের সালামির ঘ্রাণ আর পাই না। আমার কাছে ঈদ তখনই আনন্দময় লাগতো যখন তাড়াহুড়ো করে ইফতার শেষ করে মসজিদের ছাদে উঠে দুই খেজুর গাছের মাঝ দিয়ে দলবেঁধে ঈদের চাঁদ দেখতাম। বাড়িতে এসে বিটিভিতে 'রমজানের ওই রোজার শেষে' গান শোনা, সালামির এক টাকার কচকচে নোটের ঘ্রাণ অথবা লাল টুকটুকে শার্ট শৈশবের মতো এমন অকৃত্রিম ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য আমি আমার হাজারটা ফেসবুকীয় ঈদ, প্রিয়তমার মুখ দেখেই ঈদের চাঁদ দর্শন, লুবনান-ইলিনের দামী পাঞ্জাবি এবং জয়নাল আবেদিনের রমনীমুখর বিকেল ত্যাগ করতেও রাজি।

আতাউল করিম, বিভাগ: মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২ (স্নাতক)

ছুটির দিনই পেলাম খুশির সংবাদ চিরাচরিত একাডেমিক ছুটির আগেই আমার ছুটির শুরু অর্থাৎ রমজানেই তাবলিগের জন্য ক্যাম্পাস ছেড়েছি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। তাবলিগের জন্য ভাগ্যক্রমে পড়েছিলাম বিদেশী জামাতে। যেখানে ৫ জন কিরগিস্তানি এবং একজন রাশিয়ান। বিদেশী মেহমান একটু কমবেশি হলে দেশের ইজ্জতের ব্যাপার। কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ালো খাবারের জায়গা তরকারীতে না আছে লবণ মরিচ কিংবা মসলা। যাহোক এভাবেই পার হলো আমার ব্যক্তিগত ছুটি (প্রায় ১৫ দিন)। সেখানে থাকতেই ক্যাম্পাস ছুটির দিনই পেলাম খুশির সংবাদ। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন। আলহামদুলিল্লাহ। অতঃপর ফিরলাম নিজ জেলা কুড়িগ্রামে। যাত্রা পথেও ছিল এডভেঞ্চার। বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের এক্সিডেন্টের দিনই আমি ট্রেনে ফিরেছিলাম চট্রগ্রাম থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস-এ। উপর ওয়ালা চাইছিলেন বলেই এই ট্রেনে আসি নাই। বাড়ি ফেরার পর মোটামুটি দেখা মিলল সবার। অষ্ট্রেলিয়ান বড় ভাই বাদে ঈদের দিন কাটলো আলহামদুলিল্লাহ। ঈদের পরের দিন ভাগ্নির ছেলে মেয়ে অর্থ্যাৎ নাতি-নাতনি এবং জামাইসহ যুক্ত হলো। নিজের মধ্যে নানা এবং শশুড় ভাব এই বয়সেই। পরিবারের এই ছোট ছেলেটির। কিছু আত্মীয়ও যোগ হওয়ার সাথে তাদের নিয়ে বের হলাম নৌকা ভ্রমণে। উত্তরবঙ্গের সুপরিচিত ধরলা নদীতে। পাশাপাশি কিছু ঘুরাঘুরি তো আছেই। পিসি সাথে না থাকায় বাকী সময় অলসতায় কাটলো। সবাইকে বাসি ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।

মোঃ রাফিউল ইসলাম, বিভাগ: সিএসই, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮ (স্নাতক)

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ