ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার আদ্যোপান্ত

প্রকাশনার সময়: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩৪

সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশ সময় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। এই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা নিয়ে লিখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক, দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে সাংবাদিকতার আতুরঘর বলা হয়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মাধ্যমে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর সুপ্ত সাংবাদিকতার প্রতিভা ক্রমান্বয়ে বিকশিত হতে থাকে। সংবাদ সংগ্রহ, নির্বাচন কিংবা লেখায় আনাড়িপনার ছাপ থাকলেও সাংবাদিকতার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকেই একজন শিক্ষার্থী নিজেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তোলেন। প্রতিনিয়ত সৃজনশীল লেখনির মাধ্যমে পরিশীলিত করেন নিজেকে। নিজের লেখনির মাধ্যমে গড়ে তোলেন অন্য একটি সৃষ্টিজগৎ। মেতে ওঠেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। পেশাগত দিক থেকে হাউজের সাংবাদিকগণ একটি নির্দিষ্ট ইউনিট নিয়ে কাজ করলেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকগণ মিশ্র ইউনিট নিয়ে খবর পরিবেশন করে থাকেন।

একাডেমিক ব্যস্ততার মাঝেই ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে একজন সাংবাদিক তুলে ধরেন ক্যাম্পাসের সংকট, সম্ভাবনা। তিনি যেমন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দূর্নীতি, অনিয়ম দেখিয়ে দিয়ে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করেন; ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসের ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তিও তুলে ধরেন। ক্যাম্পাসের মানোন্নয়ন কিংবা সৌন্দর্যের বার্তা জাতির কাছে উপস্থাপনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা থাকে অনস্বীকার্য।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বাহ্যিক দিক দিয়ে অনেকের কাছে শখের মনে হলেও এর পদে পদে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সৌন্দর্য হলো সততা এবং সাহসিকতা। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে নিজেকে দক্ষ, সৎ এবং সাহসী হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম পন্থা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। সংকট কিংবা সমস্যা নিয়ে লেখালেখি করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সত্য প্রকাশে অনেক ক্ষেত্রে নিজের কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয় । প্রশাসনের বিভিন্ন চাপসহ অন্যান্য চাপ মাথায় রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হয়। দিন-রাত এক করে সদা তৎপর থেকে ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনাগুলো তুলে ধরতে হয়। সব সমস্যা ছাপিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিককে চালিয়ে যেতে হয় সাহসিকতার কলম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকগণ একটু আলাদা। সমাজের আর দশটা মানুষের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে ভাবতে হয় একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিককে। সাধারণ শিক্ষার্থী যেখানে ভাবনা শেষ করে, সেখান থেকে ভাবতে শুরু করেন একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে শিক্ষকমহল ও উপাচার্যের কাছে থাকে আলাদা মূল্যায়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে রয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার আলাদা দ্যুতি। দূর্নীতিবাজদের কড়কড়ে টাকার সুবাস তাদের হৃদয় বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য করতে পারে না। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশের জন্য ক্যাম্পাস সাংবাদিক দূর্নীতিবাজদের কাছে যেমন হয়ে ওঠেন চক্ষুশূল, তেমনি অর্জন করেন বিশিষ্টজনের ভালোবাসা ও স্নেহ।

সাংবাদিকগণ হলো একটি দেশের আয়না। যেখানে সবাই ভালো-মন্দের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা যেহেতু সাংবাদিক তৈরির আতুরঘর সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের বিশেষ গুরুত্ব থাকা উচিত। অনুসন্ধানী সাংবাদিক, বর্ষসেরা সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতদের পুরুষ্কৃত করে তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করা উচিত।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈতনিক বা নামমাত্র বেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সাথে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করে থাকেন। পত্রিকাহাউজ কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর উচিত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বেতন ভাতা দিয়ে অনুপ্রাণিত করা। সরকারের উচিত বেতন ভাতা কাঠামো নির্ধারণ ও চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা। পাশাপাশি আজকের ক্যাম্পাস সাংবাদিক ভবিষ্যতে যাতে মূলধারার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা।

নয়া শতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ