ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকারি বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দিচ্ছেন বুটেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারী

প্রকাশনার সময়: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:৫৪

প্রায় সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় বাসা বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর আবাসিক এলাকা- ১ এ বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বরাদ্দকৃত বাসাকে বহিরাগত ব্যাক্তিবর্গের কাছে ভাড়া দেন নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাসা ভেদে রুম প্রতি নিয়ে থাকেন ৮-১২ হাজার টাকা এবং তিনরুমের বাসা ভাড়া দেন ২২-২৪ হাজার টাকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রিম লক্ষাধিক টাকা নেওয়ারও অভিযোগ আছে।

সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা- ১ এ গিয়ে দেখা যায়, কোনোটি সাবলেট বা আংশিক, কোনোটি পুরো তিন রুমই বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিন রুমের পুরোটাই ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে চামেলী- ৮ ভাড়া দিয়েছেন সহকারী রেজিস্ট্রার এহসানুল করিম, রূপসা- ৬ ভাড়া দিয়েছেন সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার ফারুকুল ইসলাম চৌধুরী, ডালিয়া- ১ ভাড়া দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার সিদ্দিকুর রহমান, ডালিয়া- ২ ভাড়া দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার, টগর- ১৫ ভাড়া দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ড আব্দুল আলীম, রূপসা- ৭ ভাড়া দিয়েছেন পাবলিক রিলেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম, টগর- ৮ ভাড়া দিয়েছেন ড্রাইভার বাবু।

তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর বরাদ্দকৃত বাসা আংশিক বা সাবলেট হিসেবে ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে এমন বাসার সংখ্যা ৩১।

এ নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর আসে একাধিক লিখিত অভিযোগ। ‘বাসা বরাদ্দ নীতিমালা-২০১৬’-এর ধারা ১০(২): কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা পরিবার স্বাভাবিকভাবে বরাদ্দকৃত বাড়িতে না থাকে সেই ক্ষেত্রে বাসার বরাদ্দের আদেশ বাতিল হইবে–উল্লেখ করে করে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মারজানী তুবন নাহার।

অভিযোগে তিনি জানান, বরাদ্দকৃত বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়ার ফলে আবাসিক এলাকায় অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারীর পরিবারবর্গ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সাবলেট ভাড়াটিয়াদের মধ্যে পুলিশি মামলার আসামিও রয়েছে এবং প্রায়ই পুলিশের টহল দিতে আসে। সাবলেট ভাড়াটিয়ারা পরবর্তীতে আবার ২/৩ বার সাবলেট ভাড়া দিচ্ছেন। যার ফলে সুস্থ ও সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না।এছাড়াও ভাড়াটিয়াদের অনেকেই টেক্সি কিংবা রিকশাচালক হওয়ায় আবাসিক এলাকা পরিণত হয়েছে গাড়ি রাখার গ্যারেজে। আমাদের সন্তানদের নিরাপদ খেলাধুলার পরিবেশও নেই।

চামেলী- ৮ বরাদ্দপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার এহসানুল করীমকে অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখানে আমি একা ভাড়া দিচ্ছি না; সবাই ভাড়া দিচ্ছে বলেই আমি দিচ্ছি। যদি সবাইকে নিয়ম মানানো যায় তবে আমিও নিয়ম মানবো।

উক্ত আবাসিক এলাকার মেঘনা ভবনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. এমদাদ সরকার বলেন, ভাড়াটিয়াদের মধ্যে রয়েছে গাড়ির চালক কিংবা গার্মেন্টসকর্মী। ফলে আমাদের সন্তানদের সুস্থ ও সুন্দর সামাজিকীকরণ হচ্ছে না, এ নিয়ে আমরা ভীষণ চিন্তিত। এছাড়াও সাবলেট বাসায় পুলিশি মামলার আসামি অবস্থান করছে এবং মাঝে মধ্যেই পুলিশের টহল দিতে আসায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি নষ্ট হচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কাবেরি মজুমদার নয়া শতাব্দীকে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই নতুন স্থায়ী ভাইস চ্যান্সেলর আসলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান খানের ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ