ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘শেকৃবিতে অসুস্থ হওয়া আসলেই পাপ’

প্রকাশনার সময়: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:১৬

২০২১ সালে শেকৃবিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই অনেক অসুস্থ ছিলাম, তারপরও অনেক কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়েছিলো। আমি আর পেরে উঠতে পারছিলাম না। বারবার সকল ডিপার্টমেন্টের স্যারদের কাছে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখিয়ে বলছিলাম, ‘স্যার আমি অনেক অসুস্থ, ক্লাস করতে পারছি না। স্যারদের একটাই কথা ‘ক্লাস না করলে পরীক্ষা দিতে পারবে না’।

এমন আশংকাজনক অবস্থায় বারবার আমিও সুইসাইডের চিন্তা করেছিলাম কিন্তু পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দেই এবং সেখানে গণিত বিভাগে ভর্তি হই। শেকৃবি সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক গ্রুপে কথাগুলো বলছিলেন শেকৃবির সাবেক শিক্ষার্থী মো. সুজন আলী।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হলের ১০তলা থেকে পড়ে মারিয়া রহমানের আত্মহত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। অবস্থার উন্নতি হয়ে মারিয়াকে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মহিলা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। মাথায় আঘাত না পেলেও তার হাত, পা এবং কোমর ভেঙে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারিয়াকে সর্বমোট ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং উপাচার্য বলেছেন, পরিপূর্ণ সুস্থ হতে কত খরচ হবে, কি ধরনের ট্রিটমেন্ট চলবে এটা তো এখনো বলা যাচ্ছে না৷ এসবের প্রেক্ষিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং আগামী সোমবার প্রশাসন বরাবর সকল দাবি লিখিত আকারে দেওয়া হবে বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, এ ব্যাপারে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চাপতো একটু বেশি থাকবেই৷ এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে দাবি লিখিত আকারে দিলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখবো৷ তারপর যেটি ভালো হয় সেই সিদ্ধান্ত নেব।

মারিয়ার সহপাঠীরা জানান, মারিয়া বেশকিছু দিন থেকে হতাশায় ভুগছিল। ওর বেশ কয়েকটা সিটি পরীক্ষা ডিউ ছিল। যেগুলো নিতে স্যাররা অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া অসুস্থতার কারণে ক্লাস করতে পারেনি। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়।

কঠিনভাবে নাম গোপন রাখার শর্তে ১১ জন শিক্ষার্থী জানায়, গত ২০ বছরেও ডিউ পরীক্ষা নেয়নি এমন অভিযোগ উঠেছে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে উচ্চস্বরে হেসে বলে ক্লাসে উপস্থিত কম থাকার কারণে এক মেয়েকে ফেইল করায় দিছিলাম যত ভালোই পরীক্ষা দেও কোন লাভ হবে নাহ। মুড ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে পরিক্ষা দিতে আসলে পরীক্ষা না নিয়ে বলে আজকে পরীক্ষা হবে নাহ এবং সেই শিক্ষক ক্লাসে অনিয়মিত কিন্তু হঠাৎ মাঝে মাঝে ক্লাসে এসে একসাথে ৪টা এটেন্ডেন্স দেয় এমন অভিযোগ উঠেছে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

মেনেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এবং প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিলেও প্রশাসন তা গোপন করছে এবং একই সমস্যা একুয়াকালচার বিভাগের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থীর বাবা মারা যাওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেনি এমন শিক্ষার্থীরও পরবর্তীতে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি এবং ২ জন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে অসুস্থ হলেও পরীক্ষা নেয়নি এমন অভিযোগ এসেছে ডেইরি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগ ও এএসভিএম অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিউ পরীক্ষা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ৫ জন শিক্ষার্থীকে অন্যের কথায় ভাইভায় ফেল করায় এমন অভিযোগ উঠেছে এনিম্যাল সায়েন্স, জেনেটিক্স অ্যান্ড ব্রিডিং বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শিক্ষার্থী জানায়, ৪-২ ফাইনালে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এটেন্ড করি। একটা পরীক্ষা দেওয়ার পর সি-সেকশনে বেবি হয়। তিনদিন পর পরবর্তী পরীক্ষায় এটেন্ড করার জন্য যাই। কাটা পেট নিয়ে তিনতলা এক্সাম হলে যাওয়ার মত শারীরিক অবস্থা আমার ছিলো না। একজন শিক্ষক কিছুতেই আমার পরীক্ষা নিচতলায় নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে চায়নি। শেকৃবিতে অসুস্থতা হওয়া আসলেই পাপ।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ২-১ সেমিস্টারে আমার ব্লাড ইনফেকশনের কারণে আমি কয়েকটি পরীক্ষা দিতে পারিনি। কিছু শিক্ষক আছেন যারা আমার পরীক্ষা পুনরায় দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষক আছেন, যাদেরকে অনেক অনুরোধ করার পরও তারা আমার পরীক্ষা নেয়নি। আমার জানা নেই, আমাকে একটু সুযোগ দিলে তাদের কি এমন ক্ষতি হতো। জুনিয়রদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, শেকৃবিতে অসুস্থ হলে বাঁশ তোমাকে খেতেই হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ হওয়া যাবে নাহ।

শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বহির্ভুত কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, এমনটা যদি হয়ে থাকে তবে তা অমানবিক। আমরা এটি এখন শুনছি৷ তবে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমরা পুরো বিষয়টি জানার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি। সকলের জন্য সমান নিয়ম সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্যই পদক্ষেপ নিবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ