ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদ-২০২৩ এর নির্বাচন আজ। ক্লাব ভবনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। বিকাল সাড়ে তিনটায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে দু’টি দল; আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সাদা দলের মধ্যেই নির্বাচন হচ্ছে। বামপন্থী শিক্ষকদের গোলাপী দল ২০১৬ সালের পর থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সমিতির কার্যকরী পরিষদের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট পদে এর মধ্যে নীল ও সাদা দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
এদিকে, নীল দলের প্যানেল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে’ সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন। এতে নীল দলের প্যানেলে ভোট হারানোর শঙ্কাও করছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। প্যানেলের শীর্ষপদে পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচনে নেমেছেন অধ্যাপক ড. জামাল। তার দাবি, তিনি নিজেও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। তিনি সভাপতি পদ ছাড়া অন্যদের বিজয় চান। ভোটারদের নজর কাড়তে এর মধ্যে একটি প্রচারপত্র বিলি করছেন অধ্যাপক জামাল।
নীল দলে অসন্তোষ
নির্বাচন ঘিরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নীলদলে। প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছে সিনিয়র, যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়ায় অভিযোগ। এরই জেরে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন।
হারিয়ে যাচ্ছে সমিতির জৌলুশ?
নানা কারণে সমিতি তার সুনামের ধারা অব্যাহত রাখতে পারছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, সমিতি ক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশে পরিণত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, যারা শিক্ষক সমিতির নেতা নির্বাচিত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশরাই কোনো না কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
যারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়ে প্রশাসনের সাথে দরকষাকষি করবেন, খোদ তারাই যদি প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আসীন থাকেন, তাহলে সমিতির কার্যক্রমে তার প্রভাব পড়বে।
এছাড়া এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদেরে মোর্চা ‘নীল দল’ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মোর্চা ‘সাদা দল অংশ নিলেও বামপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল ‘গোলাপি দল’ অংশ নিচ্ছে না। ২০১৬ সালের পর নির্বাচন থেকে দূরে আছে ‘গোলাপি দল’। এটি কিছুটা হলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জৌলুশ কমিয়েছে।
নীল দলের প্রার্থী যারা
সভাপতি পদে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নীল দল।
সহ-সভাপতি পদে শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাফিফা জামাল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. খাদেমুল হক ও কোষাধ্যক্ষ পদে হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাসুদুর রহমান।
সদস্য পদে ১০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে নীল দল। তারা হলেন—ড. মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূইয়া, ড. মো. আমজাদ আলী, ড. মো. সাইফুল ইসলাম খান, ড. শারমিন মুসা, ড. মো. মাকসুদুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আক্কাছ, ড. চন্দ্র নাথ পোদ্দার, ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ও মো. কামরুল হাসান।
সাদা দলের প্রার্থী যারা
সাদা দল সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে সভাপতি পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
সহ-সভাপতি পদে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, কোষাধ্যক্ষ পদে ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে সাদা দল।
১০টি সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়েছেন—রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফী মোহাম্মদ মোস্তফা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল করিম, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আমিন, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ