প্রভাষক পদের লিখিত পরীক্ষায় একাধিকবার (২/৩) ফেল করেও স্বামীর প্রভাবে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের এক শিক্ষকের বউ। বিষয়টি জানিয়েছেন ওই বিভাগেরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক।
আগামী সোমবার ওই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে দুজনকে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে নিয়োগ বোর্ডের। যাতে প্রভাষক পদের পরীক্ষায় ফেল করা ওই বিভাগেরই সহযোগী অধ্যাপক মর্যাদার এক শিক্ষকের বউয়ের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে বলে জানা যায়।
গত ২ নভেম্বর আইসিটি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে দুজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি প্রশাসন। শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আবেদন করলেও বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শুধু চারজন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠায়। এদের মধ্যে তিনজনই ওই বিভাগে প্রভাষক পদে শিক্ষকতা করছেন। বাকি একজন বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রী। ওই শিক্ষক আবার কুবি ভিসির অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। তার স্ত্রী এর আগে দুই/তিনবার প্রভাষক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। প্রভাবশালী ওই শিক্ষক আবার বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য।
নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের কেউ প্ল্যানিং কমিটির কোনো সদস্যের আত্মীয় হলে ওই প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনার সময় ওই সদস্য প্ল্যানিং কমিটির সভায় থাকতে পারবেন না। অভিযোগ রয়েছে, ফেল করা ওই প্রার্থী যে কারও আত্মীয় সে বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি। এদিকে প্রভাবশালী ওই শিক্ষকের ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না কমিটির কেউ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, এখানে আমরা যারা কাজ করি কারোরই নিজের আত্বীয়স্বজনকে এইভাবে নিয়োগ পাইয়ে দেয়া উচিত না। এটা অনৈতিক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান এবং অনুষদের ডিন ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি ড. মো. সাইফুর রহমান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্ল্যানিং কমিটির সভায় কারও আত্মীয়কে নিয়ে আলোচনা হয়নি। আর প্ল্যানিং কমিটিতে কী সিদ্ধান্ত হয়, না হয় সেটাও কি আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানাতে হবে?
তবে প্রার্থীদের একজনের আত্মীয় প্ল্যানিং কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সভায় অংশ নিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে এ বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করে কুবি ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে? নিয়ম দেখতে হবে। রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন। এখানে ক্যান্ডিডেট কে ছিল আমি জানব না। আমরা শুধু ফেয়ার একটা সিলেকশন করি। কার কাছ থেকে কে আসে, তদবির কিছুই আমরা দেখি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, এখানে শুধু মৌখিক পরীক্ষা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য কখনো লিখিত পরীক্ষা হয়নি। আমি আর কিছু জানি না।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর সব নতুন নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে কুবি। শুধু অভ্যন্তরীণ প্রার্থী যারা ইতোমধ্যে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন, তারা দ্বিতীয়বার কোনো পদে আবেদন করলে তাদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পূর্বে অকৃতকার্য বউকে নিয়োগের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন ওই শিক্ষক।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ