ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাম্পিকে বিদায় জানাল সিকৃবি শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:২০

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত নাম ট্রাম্পি। কুকুর হয়েও জয় করে নিয়েছিল সবার মন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলের কাছে প্রাণীটি বেশ বিশ্বস্ত ছিল। সময়ের পূর্বেই ছয় বছর বয়সে অকাল মৃত্যু হয়েছে সিকৃবি শিক্ষার্থীদের সুখ-দুঃখের সাথী ট্রাম্পির। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আবেগঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্ম ট্রাম্পির। প্রতিবছর ২৮ ডিসেম্বর তার জন্মদিন পালন করা হতো। এবার ৭ম জন্মদিন পালনের আগেই চিরবিদায় নিয়েছে ট্রাম্পি। দীর্ঘদিন ধরে আদরে আর ভালোবাসায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ একরে বড় হয়েছে ট্রাম্পি। তার সাথে অনেক শিক্ষার্থীকেই মাঝে মাঝে দুষ্টু-মিষ্টি খেলা করতে দেখা যেত। প্রাণির প্রতি মানুষের ভালোবাসার অনন্য এক দৃশ্য তৈরি করেছিল ট্রাম্পি। ট্রাম্পির বেড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ এ এম এস কিবরিয়া হলে। ধবধবে সাদা ছোট্ট ট্রাম্পি তখন সকলের নজর কাড়ে। তখন থেকেই একটু একটু করে সবার মাঝে নিজের জায়গা তৈরি নেয় ট্রাম্পি।

প্রতিদিন সকাল বেলা সবার সাথে হেঁটে হেঁটে ক্লাসে যেত ট্রাম্পি। সবাই ক্লাস যখন করত তখন সে বসে থাকত বারান্দায়, আবার ক্লাস শেষে একসাথে বের হত। ট্রাম্পির সঙ্গে মেশার পর ক্যম্পাসের অনেকের কুকুরের প্রতি ভীতি অনেকটাই কেটে গেছে। কেউ ট্রাম্পি বলে ডাকলেই তার কাছে দৌড়ে ছুটে আসত সে। গায়ে একটু হাত বুলালেই অবুঝ প্রাণিটি কোলে চড়ে বসত। এ যেন মানুষ আর প্রাণীর মাঝে এক মিলবন্ধন, যেখানে জয় হয়েছে বন্ধুত্বের, ভালোবাসার।

ট্রাম্পি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। তাকে দেওয়া হয়েছিল ক্যামো থ্যারাপি। কুকুরকে কেমোথেরাপি দেওয়ার এই ঘটনা দেশে বিরল একটি ঘটনা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আবেগঘন ঘটনা ও ট্রাম্পির সঙ্গে স্মৃতিচারণমূলক ছবি পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে।

কৃষি অনুষদের স্নাতক শিক্ষার্থী লিমন হাসান ট্রাম্পির মৃত্যুতে বলেন, আজ কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্পি মারা গেছে, যার সঙ্গে সখ্যতা ছিলো না এমন মানুষ ক্যাম্পাসে কমই আছে। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে হলের ছাদ সব জায়গায় ছিলো তার বিচরণ। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বন্ধুরা ঘুরতে আসলে ট্রাম্পিকে ডেকে তার গল্পটা হয়তো আর বলা হবে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জয়নাল জয় স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ২০১৬-১৭ সেশন চলে। আমাদের ব্যাচটা মাত্রই গণরুমে পা রাখলো। তখন শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া হলের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় তার একটি ছোট্ট ঘর ছিলো, আমাদের কিছু দিন আগেই সে হলে আসে কিছু সিনিয়র ভাইদের মাধ্যমে।

নিয়মিত তার যত্ন, খাওয়া দাওয়া, চিকিৎসা সবকিছু হতো, মাঝখানে সে কয়েকবার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থতা চিকিৎসার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠে।

এক নামে ট্রাম্পি বলে ডাক দিলে যেখানেই থাকতো চলে আসতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিল ট্রাম্পি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আনাচে কানাচে তার চলাফেরা ছিলো। হলের প্রত্যেকটি মানুষের সাথে তার এক ধরনের আবেগ জড়িয়ে আছে।

সিকৃবির সাবেক শিক্ষার্থী আদিত্য আদি বলেন, আমরা তখন সদ্য জুনিয়র, গণরুমে ছিলাম। বড় ভাইদের দেখতাম ট্রাম্পিকে নিয়মিত খাওয়াতো। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পও বড় হয়ে গেলো। এরপরে সিলেট ছেড়ে দিলাম, আর আজ ট্রাম্পি দুনিয়া ছেড়ে দিলো। কিবরিয়া হলের প্রতিটা মানুষের গন্ধ তার মুখস্থ ছিল। পুরো সিকৃবি ক্যাম্পাসে তার রাজত্ব। ক্লাস রুম, সেমিনার সব জায়গায় ট্রাম্পকে খুঁজে পাওয়া যেতো। এবার ক্যাম্পাস গেলে ট্রাম্পকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

ট্রাম্পি নিজেকে যেমন ভালোবাসার পাত্র হিসেবে প্রমাণ করেছে, তেমনি সিকৃবি শিক্ষার্থীরাও প্রাণির প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এভাবেই যুগে যুগে নাগরিক যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি নিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভালোবাসায় মানুষ নিজেকে নিয়োজিত করবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ