ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে রেকর্ড

প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪০ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৪৪

ডলার সংকট চরমে। তবে এই সংকট কাজে লাগিয়েছে ব্যাংকের কার্ডধারীরা। আগের যেকোনো সময় থেকে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেশি করেছে তারা। রিজার্ভে টান দেখা দেয়ায় ডলার সংকট ছিল সবখানে। খোলাবাজারে ডলারের দাম আগের থেকে বেড়ে গেছে অনেক। ফলে জানুয়ারি-অক্টোবরে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন আগের বছরের একই সময়ের থেকে বেড়েছে। যা ১৭২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে দেশের খোলাবাজারে ডলারের দাম ব্যাংকের তুলনায় বেশি। আবার ব্যাংকে গিয়েও নগদ ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সবাই তাদের লিমিট অনুযায়ী কার্ডে করে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এতে গ্রাহকদের খরচ কম হচ্ছে। ফলে তারা কার্ডে লেনদেন বাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, সেই সঙ্গে গত অক্টোবর মাসে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা। এই প্রথমবারের মতো ৬০০ কোটি ছাড়িয়েছে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন। সেপ্টেম্বর মাসে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৮৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে ব্যাংকের গ্রাহকেরা কার্ডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করেছে। আগের বছরের একই সময়ে তারা খরচ করেছিল এক হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খরচ ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বাড়িয়েছেন গ্রাহকেরা।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেছে, কার্ডে ডলার খরচ করার ক্ষেত্রে ১০৬-১০৭ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ১১২ টাকা করে নগদ ডলার বিক্রি করছে। সে হিসাবে খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার নিয়ে গেলে গ্রাহকদের ডলারপ্রতি ৫-৬ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত নগদ ডলার ব্যবহারের চেয়ে কার্ড ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া, কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যয়ের ফলে তারা খোলাবাজারের চেয়ে কম রেটে লেনদেন করতে পারে বলেও এর ব্যবহারকারী বাড়ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগে সবাই দেশের বাইরে গেলে খোলাবাজার বা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার সঙ্গে নিয়ে যেত। বর্তমানে দেশের খোলাবাজারে ডলারের দাম ব্যাংকের তুলনায় বেশি। আবার ব্যাংকে গিয়েও নগদ ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সবাই তাদের লিমিট অনুযায়ী কার্ডে করে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে গ্রাহকদের খরচ কম হচ্ছে, অন্যদিকে নগদ ডলার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে না।

সরবরাহ সংকটের মুখে মার্কিন ডলারের দাম প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে ১০০ টাকায় পৌঁছে। এরপর ১০ আগস্ট কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম কার্ব রেকর্ড ১২০ টাকায় উঠে যায়। সে সময় নগদ ডলার না পাওয়ায় অনেককেই বিপাকে পড়তে হয়েছিল। এসব কারণে অনেকেই ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড বা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত হয়েছিলেন।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, কোভিডের কারণে অনেক বিধিনিষেধ থাকায় গত বছর বাইরে ভ্রমণ অনেক কম হয়েছে। চলতি বছরে বিধিনিষেধ অনেক কমে আসায় লোকজন বাইরে যাওয়া বাড়িয়েছে। এ ছাড়া কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টেও সবাই অভ্যস্ত হচ্ছে। এসব কারণে খরচ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, কার্ডের মাধ্যমে বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করা যায়। ডুয়াল কারেন্সির কার্ডগুলো বিদেশে হোটেল বুকিং এবং দেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কেনাকাটার অনুমতি দেয়।

চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৩.২০ কোটি ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডধারী ছিল। এর মধ্যে প্রায় ২.৯২ কোটি ডেবিট কার্ড এবং মাত্র ২০.৫৯ লাখ ছিল ক্রেডিট কার্ড। কার্ডে লেনদেনের বেশির ভাগই হয়েছে ডেবিটের মাধ্যমে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকেরা লোকাল ট্রানজেকশন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত অক্টোবরেও ৩৭ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অনেক মানুষই ক্যাশ টাকায় লেনদেনের চেয়ে এমএফএস বা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে অভ্যস্ত হচ্ছেন। এই প্রবণতা আমাদের দেশে ক্যাশলেস সোসাইটি নির্মাণকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ৩.৩৫ লাখ কোটি টাকা ট্রানজেকশন করেছে। আগের বছরের একই সময়ে এ ট্রানজেকশনের পরিমাণ ছিল ২.৩১ লাখ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে কার্ডের মাধ্যমে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ