ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফল আমদানিতে রেকর্ড

প্রকাশনার সময়: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৫৩

দেশে ডলার সংকটের জন্য আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো চাইলেই আর আগের মতো এলসি খুলতে পারছে না। বিলাসী পণ্যের সঙ্গে ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। মে মাসে ফল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে সরকার। জুলাইতে বন্ধ করে দেয়া হয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকের ঋণসুবিধা।

ধারণা করা হচ্ছিল, এসবের প্রভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ফলের আমদানি কমবে। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। এমন কড়াকড়ির মধ্যেও সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে ফল আমদানি। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টোটা। কমেনি, বরং আরও বেড়েছে ফলের আমদানি।

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টাসহ কোনো ফলের আমদানি কমেনি। প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় তা বেড়ে চলেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি ৬১ হাজার ৫৪০ টন বেশি হয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ২২০ শতাংশ বেশি।

জুলাইয়ে ফল আমদানি হয়েছিল ২৭ হাজার ৯৪৫ টন। নভেম্বরে তা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ৮৯ হাজার ৪৮৪ টনে উঠেছে। নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে তথ্য সংগ্রহ করায় পুরো মাসের আমদানির হিসাব পাওয়া যায়নি। পুরো মাসের হিসাব করলে ব্যবধানটা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ‘ফ্রেশ ফ্রুটস’ ও ‘ড্রাই ফ্রুটস’— এই দুই ক্যাটাগরিতে দেশে সব ধরনের ফল আমদানি করা হয়। ড্রাই ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে খেজুর, কিশমিশ ও বাদাম আমদানি করা হয়। ফ্রেশ ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে রয়েছে আপেল, কমলা, নাশপাতি, আঙুর, মাল্টা, মান্দারিন, আনার, ড্রাই চেরি, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ ৫২ রকমের ফল। এসব ফল আমদানি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, নিউজিল্যান্ড, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া, পোল্যান্ড ও ব্রাজিল থেকে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদার ৪০ শতাংশের মতো ফল দেশেই উৎপাদন হয়, বাকি ৬০ শতাংশ আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমদানি করা এসব ফলের উৎপাদন দেশে নেই বললেই চলে। এ কারণে এসব ফলের প্রায় সবটাই আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়ে থাকে আপেল, কমলা, আঙুর ও মাল্টা।’

চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ ফল আমদানি করতে হয়। এর জন্য ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এই চাপ সামাল দিতে ব্যয় সংকোচনের জন্য নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমদানি ব্যয় কমাতে নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যাতে আরও কমে না যায়, সে জন্য নেয়া হয় এ সব পদক্ষেপ।

২৪ মে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তার আগে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। এরপর সেটি দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে। প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়। ফল আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট ৪ শতাংশ নির্ধারিত ছিল।

ওই ঘোষণার পর থেকে এর সঙ্গে বাড়তি ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারকদের। এত সব বিধিনিষেধের পরেও ধারাবাহিকভাবে ফল আমদানি বেড়েছে। জুলাই মাসে ফল আমদানি হয় ২৭ হাজার ৯৪৫ টন। আগস্টে ৭ হাজার ৫৩৯ টন বেড়ে ফল আমদানি হয় ৩৫ হাজার ৪৮৫ টন।

আগস্টের তুলনায় ১০ হাজার ৩০৬ টন আমদানি বৃদ্ধি পায় সেপ্টেম্বরে। আমদানি হয় ৪৫ হাজার ৭৯১ টন ফল। অক্টোবরে আমদানি দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬৮১ টনে, যা আগের মাসের তুলনায় ৭ হাজার ৮৯১ টন বেশি। নভেম্বরে আমদানি হয়েছে ৮৯ হাজার ৪৮৪ টন, যা আগের মাসের তুলনায় ৩৫ হাজার ৮০৩ টন, যা প্রায় ৬৭ শতাংশ বেশি।

এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে ২২০ শতাংশের বেশি ফল আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই মাসের চেয়ে নভেম্বরে ফল আমদানি বেড়েছে ৬১ হাজার ৫৩৪ টন।

তবে গত বছরের তুলনায় এই সময়ে ফল আমদানি কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। গত বছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ফল আমদানি হয় ৩ লাখ ৪ হাজার ৯১৭ দশমিক ২২ মেট্রিক টন।

বিপরীতে চলতি বছর আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৬ দশমিক ৯১ টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৫২ হাজার ৫৩০ দশমিক ৩১ টন বা ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে, ফলেও দাম বেশি পড়ছে। বেশি দামে বিক্রি করতে গেলে মানুষ কিনছে না। তার ওপর ডলার সংকট থাকায় আমদানির এলসি খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। তাহলে আমদানি কমবে না কেন? তাই ফল আমদানি কমেছে।’

আমদানির পরিসংখ্যান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের সংগঠনের সদস্য রয়েছে। যে যার প্রয়োজন মতো আমদানি করে। কত আমদানি হচ্ছে সেটার হিসাব আমাদের কাছে নেই, রাখাও সম্ভব নয়। সদস্যরা বিভিন্নভাবে আমদানি ও বিক্রি করে থাকে।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ