ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মসলার বাজারে অস্থিরতা

প্রকাশনার সময়: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৩ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৫

চাল-ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দার পর এবার বাজারে মসলার দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। হু হু করে বাড়ছে দাম। আমদানিনির্ভর বেশির ভাগ মসলায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। জিরা, কাজুবাদাম, লবঙ্গ, এলাচিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে দাম। ক্রেতাদের প্রশ্ন, সবকিছুর দাম এভাবে বাড়লে কীভাবে সংসারের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। বেড়েছে লবঙ্গের দামও। কাজু ও কাঠ বাদামেও দাম বৃদ্ধির প্রবণতা। পাইকারি পর্যায়ে সাড়ে ৪শ’ টাকার কিসমিসের কেজি এখন হয়েছে প্রায় ৬শ’ টাকা। এলাচির কেজি সাড়ে ১৩শ’ টাকা। বেড়েছে দেড়শ’ টাকার বেশি। দারুচিনির দামও ক্রেতার নাগালে নেই।

অপরদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ডলার সংকটে এসব পণ্য আমদানি হচ্ছে কম। তাই বাড়ছে দাম। এসব পণ্যের দাম বাড়ায় শুধু বাসাতেই নয়, হোটেল-রেস্টুরেন্টেও বাড়ছে খাবার ব্যয়। খিলক্ষেত কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, পাইকারি বাজারে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আমরা খুচরা বিক্রেতারা বেশি দরে এনে বেশি দরে বিক্রি করছি। তবে পাইকারি বাজারে তেমন কোনো ধরনের সংকট নেই। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে সংকট না তাকলেও কারসাজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

কাওরান বাজারের পাইকারি মসলা পণ্য বিক্রেতা মো. ইলিয়াস বলেন, দেশে অল্প পরিমাণে কিছু মসলা পণ্য উৎপাদন হলেও চাহিদা মেটাতে হয় আমদানির মাধ্যমে। আর আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। সঙ্গে পণ্য পরিবহনে জাহাজ ভাড়া ও কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে। সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামও বেড়েছে। যে কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়তি। মসলার দাম বাড়া নিয়ে মিতা রানি নামে কারওয়ানবাজারের এক ক্রেতা বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে কয়েক দফায় মসলার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অথচ বাজারে কোনো মনিটরিং নেই। এখনই ব্যবস্থা না নিলে মসলার বাজারে অস্থিরতা কাটবে না।

তিনি আরও বলেন, বাজারে কোনো মসলার ঘাটতি নেই অথচ ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় দাম বাড়াচ্ছেন। তাদের এ দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, বিশ্ববাজারে মসলার দাম অনেক বেশি, এ কারণে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া ভারত মসলার রফতানিকারক দেশ হলেও বৃষ্টি বা বন্যায় তাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা নিজেরাই মসলা এখন আমদানি করছে। রমজানের আগে ভারত মসলা উৎপন্ন করবে। বাজারে ভালো মতো এলে তবেই, মসলার দাম অনেক কমে আসবে।

জানা গেছে, চলতি বছর জলপথের পাশাপাশি স্থলপথেও মসলা আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা, ধনিয়া, এলাচি, লবঙ্গ ও দারুচিনি আমদানি করা হলেও এ বছর স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে জিরা। ভারত থেকেই এ পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

আমদানিকারকদের দাবি, মসলা জাতীয় পণ্যের আমদানি খরচ বাড়তে ও বিক্রি কমে যাওয়ায় শঙ্কা কাজ করছে তাদের মনে। এ কারণে চলতি বছর কম পরিমাণে এলসি খুলেছিলেন আমদানিকারকরা। এ কারণে মসলা আমদানিও গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে যা সরবরাহ আছে তাতে করে কোরবানির ঈদ সামাল দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তারা।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মসলার আমদানি তুলনামূলক কমেছে। যা বন্দর দিয়ে মসলা আমদানির চিত্রেও ফুটে উঠেছে।

সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৬ হাজার ৭শ’ টন জিরা, ২ হাজার ১৪৭ টন ধনিয়া, ২ হাজার ৯৮৪ এলাচি, ১ হাজার ৫৫২ টন লবঙ্গ, ১২ হাজার ৯৬৫ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে। এর আগে গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৮ হাজার ৪১৬ টন জিরা, ২ হাজার ২৯৯ টন ধনিয়া, ৩ হাজার ৪০৫ টন এলাচি, ১ হাজার ৮১৪ টন লবঙ্গ ও ১০ হাজার ৬২৭ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।

এদিকে ভারত থেকে চলতি বছর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে জিরা আমদানি করা হয়েছে। ভারত থেকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১০ হাজার ৬০৭ টন জিরা আমদানি করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৩ হাজার ৩শ’ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ হাজার টন, মার্চে ১ হাজার ৯৭০ টন, এপ্রিলে ২ হাজার ৫শ’ টন ও মে মাসে ৩ হাজার ৩০ টন জিরা আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ মসলা আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি অমর দাশ সিভয়েসকে বলেন, বিশ্ববাজারে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আছে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন উন্নত ও ধনী দেশগুলো ভালো মসলা নিয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আসে। যেমন-এলাচি আসে মাঝারি মানের। বন্দরের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও মসলা আমদানি হচ্ছে।

বিশেষ করে জিরা আমদানি হচ্ছে সড়কপথে। তবে ডলারের দাম ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর মসলার আমদানি তুলনামূলক কম। কারণ ক্রেতার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আমাদের মোকামগুলোতেও বেচাবিক্রি কমে গেছে। তাই আমদানিকারকরা কম এলসি খুলেছেন। আমদানিও গত বছরের তুলনায় কম করেছেন। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) সভাপতি মো. গোলাম রহমান বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে বাড়তি দামে মসলা বিক্রি করছেন। শুকনা মরিচ আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। অথচ এটিও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখন থেকে বাজার তদারকি করা খুবই জরুরি।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ