ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তবুও দামের উত্তাপ

প্রকাশনার সময়: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২৩

শীতের আবহাওয়া রাজধানীজুড়ে। শীতের সবজিতে বাজারও ভরা। বাজার শীতের সবজিতে ঠাসা থাকলেও দাম কমেনি। শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, গাজরসহ সব কিছুরই দাম যেন ভরা মৌসুমের আগের। রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে পাইকারি কিনে এসব সবজি খুচরা বাজারে বিক্রি করা হয় পাইকারির চেয়েও অনেক বেশি দামে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কারওয়ানবাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কেজির প্রতি পাল্লা মুলা ১০০ টাকা, শালগম ১৩০, শিম ১৭০, পাতা পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ধুন্দল ১৫০, করলা ১৮০-২০০, কাঁচা টমেটো ১৫০, পাকা টমেটো ৫০০-৫৩০, বরবটি ২৪০, বেগুন ১৫০-২০০, ধনিয়া পাতা ৩৫০, চিচিঙ্গা ১৫০, পটল ১২০, আলু সাদা ১১০, লাল ১২০, নতুন আলু ২৫০, গাজর ২৫০, ঢেঁড়স ১৬০, কাঁচামরিচ ১৩০ টাকা। আরও দেখা গেছে, লতি পাল্লা প্রতি (৫ কেজি) ২২০ টাকা, জলপাই ১০০, বাঁধাকপি ৩০ টাকা পিস, লেবু এক থেকে আড়াই টাকা প্রতি পিস। মাঝারি সাইজের ফুলকপি ১২-১৫ টাকা পিস ও বড় সাইজ ২০ টাকা, কাঁচাকলা ২০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।

ট্রাকভর্তি ফুলকপি নিয়ে বিক্রি করতে কারওয়ানবাজারে এসেছেন আব্দুল মোতালেব।তিনি বলেন, আমার ফুলকপিগুলো মাঝারি সাইজের ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করেছি। অন্যান্য বারের থেকে এ বছর দাম কিছুটা কম। শীতের শুরুর দিকে দাম সব সময় ভালো পাওয়া যায়। তবে এবার বাজারে চাহিদা একটু কম মনে হচ্ছে, ফলে দামটাও আশানুরূপ পাচ্ছি না।

রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের কিছু সবজির আনাগোনা রয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। তবে দাম বেশ চড়া। শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গাজরের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। বাজারে পুরনো পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বাজার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, করল্লা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পটলও।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢেঁড়সের কেজি ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, ধুন্দলও বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আকার ভেদে চাল কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফাঁলি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে মিলছে মরিচ। কাঁচাকলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে খুচরা সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি মূল্যের চেয়ে খুচরা মূল্যের প্রতিটি সবজি ১০ থেকে ২৫ টাকা কেজি প্রতি বেশি বিক্রি হচ্ছে। মতিঝিল বাজারের লাভলু মিয়া টমেটো বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা অথচ পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। ১ কেজি টমেটোতে ৩০ টাকা বেশি। এভাবে তার দোকানে সব সবজি পাইকারি দামের চেয়ে ১০-৩০ টাকা কেজিপ্রতি বেশিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সবজি ক্রেতা তারেক মাহমুদ বলেন, সবজির বাজার সব সময় ঊর্ধ্বমুখী থাকে। বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারিভাবে নিয়মিত মনিটরিং করা হলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতে বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ বেশি উপকৃত হবে। প্রতি কেজি সবজি পাইকারি মূল্যের চেয়ে খুচরা বিক্রি অনেক বেশি। আয় না বাড়লেও দিন দিন সংসারের খরচ বেড়েই চলছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে গরু, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭০০ টাকায় আবার কোনো কোনো দোকানে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাংস বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, একটা গরুর কেনা দাম অনেক বেশি, সঙ্গে বিভিন্ন চাঁদা, দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতন সব মিলিয়ে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করলেও লাভ করা যায় না। এর চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব না।

তবে সমস্যা হয়েছে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অনেকে মাংস বিক্রির ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছেন। কিন্তু যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তারা এই ব্যবসা ছাড়তে পারছেন না, চালিয়ে নিতেও পারছেন না। কারণ, ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ ক্রেতারা গরুর মাংস কিনছেন না। রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মেহেদি হাসান বলেন, দাম খুব বেশি থাকার কারণে সাধারণত গরুর মাংস কেনা হয় না। অনেকে আছেন শখ করেও গরুর মাংস কিনতে পারেন না। বাসায় যদি কোনো আত্মীয়স্বজন আসে সেক্ষেত্রে আমরা বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে গরুর মাংস কিনি। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে মাসে একবারও গরুর মাংস কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা সাধারণ মানুষের নেই। এত দাম দিয়ে কি মাংস কিনে খাওয়া যায়?

অন্যদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই মাস আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিল। এক ধাপ দাম কমলেও আবারও গত মাসে ব্রয়লারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল কক মুরগিও বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়, এছাড়া লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।

মাংসের পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী: মাংসের পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়, পাবদা মাছ আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চাষের কই ২৪০ টাকায়, পাঙাস মাছ ২০০ টাকায়, সিলভার কার্প ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, সিং ছোট সাইজের মাছ ৪০০ টাকায়, ট্যাংড়া মাঝারি ৬০০ টাকায়, ছোট চিংড়ি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টাকি মাছ ৪০০ টাকায়, আঁইড় মাছ ৮০০ টাকায়, রূপচাঁদা মাঝারিটা ৭০০ টাকায়, কাতল ৩০০ থেকে আকার ভেদে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর গুলশান লেক সংলগ্ন বাজারে আসা ক্রেতা ফিরোজুল ইসলাম বলেন, বাজারে আর কম দামের কোনো মাছ পাওয়া যায় না। এখন সব মাছের দাম বাড়তি। বাজারে এসে খুঁজে দেখি কোন মাছের দাম কম, এরপর সেই মাছ অল্প করে কিনে নিয়ে যাই। ভালো কোনো মাছ তো আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা আর কিনতে পারে না। বাজার খুঁজে সবচেয়ে কম দামের মাছ বলতে ২০০ টাকায় পাঙাস আর তেলাপিয়া, এছাড়া ২৪০-২৫০ টাকায় চাষের কই পাওয়া যায়। এসব মাছ ছাড়া অন্য সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যা কেনা সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।

মাছের দাম বেড়েছে এ কথা স্বীকার করে একই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল বলেন, মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণেই বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে আগের চেয়ে মাছ পরিবহন করে আনার খরচও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ