রাজস্ব আদায়ে ভাটার টান অব্যাহত। লক্ষ্য আদায়ে ব্যর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতার জন্য চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল থাকলে রাজস্ব আদায়েও গতি বেশি হয়। নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ সন্তোষজনক।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) মাথায় তা সাড়ে ৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে আছে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায়ও। তিন মাস শেষে আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ হলেও অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়েছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে পাওয়া সাময়িক হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৯ হাজার ৬২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর শুধু অক্টোবর মাস হিসাবে রাজস্ব এসেছে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০.০৯ শতাংশ হলেও পিছিয়ে আছে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সদস্য) বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি-পরবর্তী চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বাইরে নয় আমাদের দেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল থাকলে রাজস্ব আদায়েও গতি বেশি হয়। তারপরও বলব এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সাফল্য সন্তোষজনক। আমরা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৪ শতাংশ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছি। যে হিসাবের কথা বলছেন সেটা সাময়িক।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত হিসেবে আরও কিছু রাজস্ব যোগ হবে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কর সেবা মাস চলছে। এবারে অনেক বেশি রিটার্ন জমা হবে। যার মাধ্যমে রাজস্ব খাতে ইতিবাচক পড়বে বলে মনে করি।এনবিআর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আদায় ৩৪ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ঘাটতি ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।
এরপরই আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে সাময়িক হিসাবে শুল্ক-কর আদায় হয়। এই খাতে আদায় ২৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩.৬০ শতাংশ। ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অক্টোবর পর্যন্ত আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১২.১৭ শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর আগে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ৪ হাজার ৭৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সেক্টরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৭ হাজার ১০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১৭৮ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা।
এর আগে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে সাত দফা পরিকল্পনা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে রাজস্ব আদায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বড় ধরনের পরিবর্তন ইতিবাচক প্রভাব এখনো দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৬.০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ