ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বেড়েছে চালের দাম, কমেনি মরিচের ঝাল

প্রকাশনার সময়: ১৪ আগস্ট ২০২১, ০২:৪৩

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মোটা চালসহ সব ধরনের চালের। চালে আমদানি শুল্ক কমালেও এর প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। ইলিশের ভরা মৌসুমেও কেজির ওপরে ইলিশ হাজার টাকার নিচে মিলছে না। তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে অন্যসব মাছের বাজার। এছাড়া বাজারে সবজির দাম অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে গত সপ্তাহে এক লাফে ২০০ টাকায় উঠে যাওয়া কাঁচামরিচ এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে শীতের আগাম সবজি শিম ও ফুলকপি রাজধানীর বাজারগুলোতে চলে এসেছে। এসব সবজি একটু চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। শিম কিনতে ক্রেতাদের কেজিতে ১৬০-২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর ছোট একটা ফুলকপি কিনতে লাগছে ৩০-৫০ টাকা।

অন্যদিনের তুলনায় বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচামরিচের দামও বাড়তি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা, মহাখালী, কারওয়ান বাজার ও খিলগাঁওয়ের আশপাশের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেল।

ক্রেতা ও বিক্রেতা বলছেন, কয়েক মাস ধরেই বাজারে চালের দাম বেশি। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকা বা এর আশপাশে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা বা এর কাছাকাছি।

চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগে বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। সাধারণত প্রতিবছর এ সময় চালের দাম কম থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি মজুত কমে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ব্যতিক্রম। তারা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই এবার চালের দাম বাড়ছে।

বাজারে চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সর্বনি¤œ ৫০ টাকায়। এছাড়া মোটা চাল কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৬৬-৬৮ টাকা, বাংলামতি ৭৩-৭৫ টাকা, পাইজাম আতপ ৬৩-৬৫ টাকা, মিনিকেট চিকন ৬৬-৬৮ টাকা, পোলাও চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে শুধু কাঁচামরিচের ঝালই বেশি। কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এক লাফে কেজি ২০০ টাকায় উঠে যাওয়া কাঁচামরিচ এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করছেন।

এছাড়া কেজিপ্রতি পেঁয়াজ দেশি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকার ও মানভেদে বেগুন ৫০-৬০ টাকা, পালংশাক ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০ টাকা, পটোল ৪০-৪৫ টাকা, কচু ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটোলের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগের মতো ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

ইলিশ বিক্রেতা মো. সুরুজ আলী জানান, কেজির নিচে ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, কেজির ওপরে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা আর দেড় কেজির ওপরে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দাম আরো কিছুদিন পর কমবে। তখন কেজিপ্রতি ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় মিলবে।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। ঈদের পর থেকেই মাছ এই দামে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে নতুন আসায় এখন শিম ও ফুলকপির দাম একটু বাড়তি। এই বাড়তি দাম আরো কিছু দিন থাকবে। তবে দাম বেশি হলেও বাজারে শিম ও ফুলকপির বেশ চাহিদা রয়েছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সরদার ফরিদ বলেন, বাজারে যখন নতুন কোনো সবজি আসে তার দাম একটু বাড়তি থাকে। সে হিসেবে এখন শিম ও ফুলকপির দাম খুব বেশি না। শিগগির এ দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং সামনে আরো বাড়তে পারে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, অল্প কয়েকদিন ধরে বাজারে শিম ও ফুলকপি আসতে শুরু করেছে। বাজারে এ দুটি সবজির চাহিদা বেশ ভালো রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বা আধা কেজি করে কিনছেন। কিছুটা বেড়েছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।

মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. সিকান্দার বলেন, লকডাউন তুলে নেয়ার কারণে গ্রাম থেকে অনেকে ঢাকায় ফিরেছেন।

হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে মুরগির চাহিদা এখন একটু বেশি। তাই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা বেড়েছে। আমাদের ধারণা সামনে দাম আরেকটু বাড়তে পারে।

মালিবাগের ব্যবসায়ী ঝন্টু বলেন, শীতের সবজি বাজারে ভরপুর আসার আগে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এখন যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে তা আরো চার মাসের মতো থাকতে পারে।

বাজারে দেশি ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়, ভারতীয় ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ডিমের ডজন ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ