দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপে। অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো এখন নানা সংকটের মুখোমুখি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের নিম্নমুখী লেনদেন। এ নিয়ে টানা তিন মাস কমলো ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন। তবে এ সময় বেড়েছে কার্ডের সংখ্যা। একই সময়ে ডেবিট কার্ডে লেনদেন বাড়লেও ক্রেডিট কার্ডে কেন লেনদেন কমছে— তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি কমাতে জারি করা বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে কার্ডের ব্যবহার কমেছে। এ ছাড়াও আর্থ-সামাজিক অনেক বিষয় ভূমিকা রাখছে লেনদেন কমায়।
গ্রাহকের তাৎক্ষণিক টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। টাকার প্রয়োজনে কারও কাছে না গিয়ে এই কার্ডে ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ টাকা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের কেনাকাটা ও সেবার মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। কোনো সুদ ছাড়া টাকা পরিশোধে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় মিলছে। শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বিদেশে গিয়েও এসব কার্ডে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা ২,২৮২ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। আগস্টে লেনদেন হয়েছিল ২,৩০২ কোটি টাকা। জুলাইতে ক্রেডিট কার্ডে ২,৫৭৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ডেবিট কার্ডে একক মাস সেপ্টেম্বরে লেনদেন ৩৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। আগস্টে লেনদেন হয় ৩৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ডেবিট কার্ড ইস্যু করা হয় গ্রাহকের নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে। অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলে তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেন, না থাকলে ওঠানো যায় না। প্রিপেইড কার্ডের ধরনও প্রায় একই রকম। তবে এ ধরনের কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনের নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়।
আর ক্রেডিট কার্ড ইস্যু হয় মূলত ঋণ নেয়ার জন্য। এ ধরনের কার্ডের বিপরীতে গ্রাহক নির্ধারিত পরিমাণের ঋণ পান। তবে নির্ধারিত সময়ে কেউ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাকে মোটা অঙ্কের সুদসহ আসল পরিশোধ করতে হয়, যার হার প্রচলিত সুদহারের তুলনায় অনেক বেশি।
জুলাইতে ক্রেডিট কার্ডে ২,৫৭৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। কার্ড সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৭ হাজার ৭৭৪টি। আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয় ২০ লাখ ২২ হাজার ২৫৯টি। তবে লেনদেন কমে হয় ২,৩০২ কোটি টাকা। এরপর সেপ্টেম্বরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৮টি। কিন্তু লেনদেনে আরও কমে হয় ২,২৮২ কোটি টাকা।
এর আগে চলতি বছর এপ্রিলে ক্রেডিট কার্ডে রেকর্ড ২,৭১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এক মাসে ক্রেডিট কার্ডে এত লেনদেন আগে কখনো হয়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় মার্চে, ২,৫১৩ কোটি টাকা। জুনে লেনদেন ২,৪৯১ কোটি টাকা। এটি ক্রেডিট কার্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো দিতে না পারলে জরিমানার পাশাপাশি অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়। ব্যাংকে সুদহার ৯ শতাংশ হলেও কার্ডের সুদ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আছে।
২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মানে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। তবে এই নির্দেশনাও অমান্য করে অনেক ব্যাংকই বিভিন্নভাবে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করত।
ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না বলে নতুন নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ওই বছর ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।
সেপ্টেম্বরে ডেবিট কার্ড সংখ্যা ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫২টি। লেনদেন হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। আগস্ট শেষে ডেবিট কার্ড ২ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪টি। এসব কার্ডে লেনদেন ৩৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। জুলাইতে লেনদেন ছিল ৩৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
আর চলতি বছরের ছয় মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে ডেবিট কার্ড ছিল ২ কোটি ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৮টি। লেনদেন হয় ২৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। তিন মাস পর মার্চ শেষে কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭টি। লেনদেনও বেড়ে হয় ২২ হাজার কোটি টাকা।
এর তিন মাস পর জুন শেষে ডেবিট কার্ড ব্যবহার আরও বাড়ে। এ সময় কার্ড ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭ হাজার ২০১টি। এসব কার্ডে ২৮ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
প্রি-পেইড কার্ডের গ্রাহক ৩০ লাখ ৯৯ হাজার ২০১ জন। এ সময়ে এসব কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৩২৮ কোটি টাকা। আগস্টে লেনদেনে ছিল ২৯৭ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ