ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রফতানিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার

প্রকাশনার সময়: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৭

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্নাতক হওয়ার পর বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম মেনে চলার জন্য দেশের নগদ প্রণোদনা সুযোগগুলো পরীক্ষা করার জন্য একটি ‘ভর্তুকি স্টাডি গ্রুপ ’ গঠন করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯ সদস্যের এই গ্রুপটি অর্থনৈতিক স্নাতক পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার ও ট্যারিফ যৌক্তিকতাসংক্রান্ত একটি উপ-কমিটির অধীনে গঠিত হয়। স্টাডি গ্রুপটির তত্ত্বাবধান করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি মনিটরিং সেলের মহাপরিচালক আরফিন আরা বেগম। কমিটির শর্তাবলি অনুযায়ী, এই কমিটি দেশের বিভিন্ন রফতানি খাতের মধ্যে বিতরণ করা নগদ প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করবে।

এছাড়া, ডব্লিউটিও’র নিয়মের সঙ্গে মানানসই ভর্তুকি আলাদাভাবে মনোনীত করার জন্য চিহ্নিত করা হবে। ডব্লিউটিওর নিয়ম না মেনে যে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো অন্য সাব-সেটে রাখা হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডব্লিউটিওর নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য বাজেট থেকে ধীরে ধীরে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করতে হবে। অতএব, কীভাবে এটি করা যায় সে সম্পর্কে সরকারের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের খুব প্রয়োজন। কিছু খাতে দেয়া ভর্তুকি এবং প্রণোদনা অবশ্যই সেই নিয়মগুলোর অধীনে যৌক্তিক করা হবে।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নের জন্য ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে শিগইগির স্নাতক হবে। এ কারণে ভর্তুকি এবং প্রণোদনা ব্যয় পর্যালোচনা করাও প্রয়োজন।

সরকারের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, যেমন শুল্কমুক্ত কোটা মুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার, একতরফা এবং অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার ক্ষতিকর। এছাড়া, আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে রেয়াত বা স্বল্প সুদে তহবিলের জন্য বাংলাদেশের সুযোগ এবং এক্ষেত্রে নমনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে এবং রফতানি বাণিজ্য আন্তর্জাতিক মান কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ১৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। যা দেশের জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

রফতানি সম্প্রসারণের জন্য, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রফতানির পরিমাণের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য ৪২টি সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, সরকার নগদ প্রণোদনা হিসেবে রফতানি আয়ের ১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ দিচ্ছে।

নগদ প্রণোদনার জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্ত বজায় রাখতে হবে। এই নগদ প্রণোদনা সম্ভবত ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশের রফতানি ৩৪ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। একই সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন— নগদ প্রণোদনা চালিত রফতানি বৃদ্ধি কি বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে কিনা।

জানা গেছে, এলডিসি স্নাতকের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি সময় সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনাসহ খসড়া কৌশল তৈরি করতে সাতটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ যে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে তার প্রস্তুতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

এই কমিটির অধীনে সাতটি উপ-কমিটি থাকবে বলে কমিটির দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি উপ-কমিটিতে বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডার এবং উন্নয়ন গবেষকদের সদস্য রয়েছে।

এই সাব-কমিটিগুলো এলডিসি স্নাতকের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি সময় সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনাসহ খসড়া কৌশলগুলো প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) কার্যকর করার নীতি গ্রহণ করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপায় হিসেবে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার এবং বাণিজ্য চুক্তির জন্য কৌশলগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে একটি অগ্রাধিকারমূলক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করেছে। যার আওতায় ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকবে এবং বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে একই ধরনের সুবিধা পাবে।

এছাড়া, ভারত, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নেপাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন, আসিয়ানের মতো ১৩টি সম্ভাব্য বাণিজ্য দেশ এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে পিটিএ, এফটিএ বা সিইপিএ কার্যকর করার জন্য একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ