ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দামের চাপে নিম্ন-মধ্যবিত্ত

প্রকাশনার সময়: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৮

বাজারে পণ্য কিনতে গিয়ে স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। প্রতিটি পণ্যের দামই হু হু করে বাড়ছে। ফলে কেবল নিম্নবিত্ত নয়, দামের চাপে ব্যাগের তলানিতে পণ্য নিয়ে ফিরছেন মধ্যবিত্তও। নিম্নবিত্তদের অবস্থা অবর্ণনীয়।

শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দাম বাড়ার কোনো কারণ না থাকলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে মোটা চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের বাড়তি দামের চোটে একদিকে যেমন ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনি বিক্রেতাদেরও কেনাবেচা কমেছে।

সবকিছুর দাম বাড়তি। দাম শুনে অনেকে পণ্য না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যেটা না নিলেই নয়, সেসব পণ্য এক কেজির জায়গায় আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে যারা পুরো প্যাকেট নিতেন, তারা খোলা কিনছেন। এমন অবস্থায় ক্রেতারা নাজেহাল। বাজারে একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। খরচ কমাতে কমাতে একবেলা না খেয়ে থাকার চিন্তায় আছেন অনেকে।

পরিবারকে নিয়ে রাজধানীর মালিবাগে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন জাহিদুর রহমান। স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার তার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। দুজনের মাসিক আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এই টাকাতেও রাজধানীতে বসবাস করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসের শুরুর কয়েক দিন কিছুটা চলতে পারলেও নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শেষ দিকে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। শেষের দিনগুলো যেন যেতেই চায় না।

জাহিদুর বলেন, ‘আগে এই ইনকাম দিয়ে সুন্দর চলতো আমাদের। সারা মাসের খরচ চালিয়ে কিছু সেভিংস করতে পারতাম। গ্রামের বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটা আর হয় না। এমন কোনো জিনিস নেই যেটার দাম বাড়েনি। সেভিংস করব কী? সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। উল্টো আরও ধার করতে হচ্ছে।’

জাহিদুর রহমানের মতো একই অবস্থার কথা জানালেন শাহ নেওয়াজ। তিনিও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। জাহিদুর বলেন, ‘সংসার চালাতে অনেক খরচ কমিয়ে দিয়েছি। এখন রিকশায় ওঠা বাদ দিয়ে দিয়েছি। সংসারে বাজার খরচ কমিয়ে দিয়েছি। সব কিছুরই দাম বাড়ে শুধু আমাদের আয় ইনকাম বাড়ে না। সামনের দিনগুলো যে কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।’

শুধু জাহিদুল কিংবা নেওয়াজই নয়, রাজধানীতে বাস করা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যারা আছেন তাদের বেশিরভাগেরই অবস্থা এমনই। যারা এক সময় নিয়মিত ইনকাম দিয়ে মোটামুটি জীবনযাপন করতেন তাদের এখন সংসার চালানো হিমশিম অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার মতো অবস্থা তাদের। টিসিবির লাইনেও এখন দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ভিড়।

সিপিডি গবেষণায় জানায়, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কমেপ্রামাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা।

অনেক দিন ধরেই ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চাল-মাছ-মাংস থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শাকসবজির দামও। এমন অবস্থার মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হলে চাপ আরও বেড়ে যায়। পোশাক-আশাক, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা-ব্যয় সব দিকেই বাড়তি মূল্য। আর এমন মূল্যবৃদ্ধির চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা মধ্যবিত্ত।

গতকাল শুক্রবারের বাজারে নতুন অস্বস্তি নিয়ে এসেছে ভোজ্যতেল। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছিল এক মাস আগে। এর মধ্যেই আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবার তারা লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে চান। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়ার পর এরই মধ্যে বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। সে জন্য এখন বেশির ভাগ দোকানে আগের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে আরও বেশি দরে।

সরকার ঘোষণা দেয়ার আগেই ডিলাররা তেলের দাম বেশি নেয়া শুরু করেছে। বোতলজাত সয়াবিনের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে পাইকারি বাজারে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ড্রাম (২০৪ লিটার) সয়াবিন ও পাম তেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে।

বাজারে চিনির দাম এখনো কমেনি। প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আবার সরকারি চিনিকলের চিনিগুলো প্রতিকেজি ৮৫ টাকা দর নির্ধারিত থাকলেও সেসব বাজারে মিলছে না।

গত তিন দিনে মিল পর্যায়ে মোটা চাল প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে খোলা চালের দামও বেড়েছে ১-২ টাকা। প্রতি কেজি পায়জাম ও গুঁটি স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৬ টাকায়। বিআর-২৮ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

খুচরা বাজারে বেড়েছে খোলা আটা-ময়দার দামও। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। যা আগে ৫ টাকা কম ছিল। একইভাবে ভালো মানের ময়দার দাম ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। ডালের দামও গত তিন-চার দিনে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি প্রতি কেজি মশুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ এবং আমদানি করা ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ঠেকেছে ৬০ টাকায়। আবার ভালোমানের বাছাই করা পেঁয়াজ নিতে গেলে কোথাও কোথাও ৭০ টাকাও দিতে হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকা কেজি। ৮০ টাকা বা তার কিছু কমবেশি দামের সবজির তালিকায় রয়েছে কাকরোল, কচুর লতি, উস্তা, করলা, ঝিঙা ও শিম। বেগুন, পটল, চিচিঙ্গা, মুলা ও একপিস ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকার মধ্যে। কম দামে শুধু পেঁপে, যা ৪০ টাকা কেজি। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ