ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডলারে খোলাবাজারে সুখবর

প্রকাশনার সময়: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৯

ডলার নিয়ে সংকটে দেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপও সংকট কাটছে না। তবে এবার কিছুটা হলেও সুখবর নিয়ে এসেছে ডলার। খোলাবাজার বা কার্ব মাকেটে কমেছে দাম। বেশ কিছু দিন পর ১১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।

গত সোমবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১০৯ টাকা ৮০ পয়সা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তার আগের দিন পাওয়া গেছে ২ টাকা বেশি ১১১ টাকা ৫০ পয়সায়। তার আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে এই বাজারে প্রতি ডলার ১১৪ টাকা থেকে ১১৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে।

এদিকে গত রোববার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করেছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায়। এতে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দরের ব্যবধান দেড়-দুই টাকার মধ্যে চলে এসেছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে যেটাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

বাজারে ডলার সংকট কাটাতে কোনো পদক্ষেপেই যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা গত ১১ সেপ্টেম্বর এক সভায় ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেন। তাতে রফতানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। যেটাকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়।

টাকা-মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরও খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছিল। ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের দরও বেড়ে যায়। তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেন অবশ্য ১০৮ টাকার ওপরে ওঠেনি। গত রোববার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দর একই ছিল ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা।

সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংক ১০৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছে ১০৮ টাকা। বেসরকারি ইস্টার্ণ ও সিটি ব্যাংক ১০৬ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। খোলাবাজারে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা ডলারের দর বাড়তে বাড়তে গত ১০ আগস্ট ১২০ টাকায় পৌঁছায়।

এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযানের মুখে নিম্নমুখী হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। তার পরও ১১০ টাকার ওপরে অবস্থান করছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোলাবাজারের এক ডলার ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। মানুষ এখন ভালো বিক্রি করতে আসে। সে কারণেই দাম কমেছে।

গত বছরের আগস্ট থেকে দেশে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। দেখা দিতে থাকে ডলারের সংকট। বাড়তে থাকে দর। শক্তিশালী হতে থাকে ডলার, দুর্বল হতে থাকে টাকা। সেই পরিস্থিতিতে ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোর দামকে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেই দরকেই আন্তঃব্যাংক লেনদেন দর বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। আগের দিনের লেনদেনের দরকে পরের দিন সকালে প্রকাশ করা হয়। এটাকেই বাজারভিত্তিক দর বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১৩ সেপ্টেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছে, তার দাম অবশ্য ভিন্ন। এতদিন রিজার্ভ থেকে ৯৬ টাকায় ডলার বিক্রি করলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে ৯৭ টাকায় বিক্রি করছে। এটাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সেলিং রেট’। জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারি কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করা হয়েছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) অবশ্য বাজার থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে কিন্তু আমাদের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট (বিওপি) ইতিবাচক। আইএমএফের ঋণটা পাওয়া গেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ২০ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেলে আমাদের রিজার্ভ ফের বাড়তে শুরু করবে।’

একই কথা বলেছেন, বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডলারের বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমদানি বেশ কমেছে; তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এখন ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হবে। আর এটা অব্যাহত থাকবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’

তবে অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কথা শুনে ডলারের বাজার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক কাজটি করেনি। আমি মনে করি, সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিজ যোগ্যতায় নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি ব্যাংকারদের ওপর একদমই ছেড়ে দেয়া উচিত না। তাতে করে হিতে-বিপরীত হবে আসলে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ