ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ধস

প্রকাশনার সময়: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৩

তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মানুষ এই খাতের দিকে যেভাবে ঝুঁকছে—তাতে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে সবার আশা সব থেকে বেশি। গত বেশ কিছুদিন ধরে এই খাতে লেনদেন বৃদ্ধি ছিল চোখেপড়ার মতো। সংশ্লিষ্টরা বেশ আশাবাদী ছিল এই খাত নিয়ে। কিন্তু হঠাৎই টানা দুই মাস ধরে উল্টো পথে হাঁটল মোবাইল ব্যাংকিং। আশার সেই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের লেনদেন হাঁটল উল্টো পথে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন, যা জুলাই মাসে লেনদেনের চেয়ে ১,৭২৩ কোটি টাকা কম। জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর আগে জুনে লেনদেন হয় ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাকবিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তবে এমএফএসের কর্মকর্তারা এটিকে স্বাভাবিক চিত্র হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, জুন মাসে ঈদ গেছে। ওই সময় বেশি লেনদেন হয়েছে। সাধারণত ঈদ-পরবর্তী লেনদেন কমে যায়। ঈদের আগের মাস জুনে মানুষ কেনাকাটা বেশি করেছে। বেতন-বোনাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেয়ায় লেনদেনে বেড়ে যায়। ঈদের পর জুলাই-আগস্ট মাসে লেনদেনটা কম হয়—এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্টে যে লেনদেন হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের আগস্টে টাকা জমা, উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধ সবকিছু মিলে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা।

নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৬১০। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৮৮১ এবং নারী গ্রাহক ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮২। মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৮।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।

আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসেবে ২৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিসেবার ২ হাজার ২৬২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহ ভাগই বিকাশের দখলে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ