ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্রাহকদের টাকা ফেরত নিয়ে যা বললেন ইভ্যালির শামীমা

প্রকাশনার সময়: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৫

ইভ্যালিতে আগের অর্ডার করা পণ্য ও রিফান্ডের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন তিনি।

বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ। এছাড়া আছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী কামরুন নাহার ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।

ইভ্যালির ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শামীমা নাসরিন বলেন, আমরা পাওনা পরিশোধের জন্য ৬ মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু এ সময় শেষ হওয়ার আগেই আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে ৪০০ বিক্রেতা ইভ্যালিকে আগাম পণ্য দিবে এ মর্মে আদালতে হলফনামা দেয়া হলে আমাদের পুনরায় ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়।

নতুন করে ইভ্যালি কোন পথ অনুসরণ করে ব্যবসা করবে এ ব্যাপারে শামীমা নাসরিন বলেন, আমরা এখন থেকে মুনাফা ছাড়া একটি পণ্যও বিক্রি করবো না। মূলত আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি কিংবা পিক অ্যান্ড পে এর মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনা করবো।

গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যাপারে শামীমা বলেন, অবশ্যই আমাদের টাকা রিফান্ডের পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য আমাদের সার্ভার ওপেন করে দিতে হবে। সার্ভার ওপেন না করলে এটা সম্ভব হবে না। এ জন্য আমাজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু মোহাম্মদ রাসেল কারাগারে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

শামীমা মানিলন্ডারিং এর ব্যাপারে বলেন, সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন আমরা মানিলন্ডারিং করেছি। তিনি বলেছেন আমরা প্রতি মাসে দুবাই যেতাম। প্রথমত, অডিটের আগেই আমরা মানিলন্ডারিং করেছি এ কথা বলা যুক্তিযুক্ত নয়। আর আমরা দুবাই গিয়েছি মোট দু'বার, তাও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজতে, ঘুরতে না। এছাড়া যে মানিলন্ডারিং এর বিরুদ্ধে অডিট চালানো হয়েছে, সেখানে শেষমেশ বলা হয়েছে তথ্যের ঘাটতি থাকায় অডিট সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এর মানে কিন্তু কেউ প্রমাণ করতে পারেনি আমরা মানিলন্ডারিং করেছি। এটা একটা মিথ্যা কথা। হয় সাবেক বিচারপতি না বুঝে এসব বলেছেন নয়তো ইচ্ছা করেই ইভ্যালির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে শামীমা বলেন, র‌্যাব যখন আমাদের অফিসে অভিযান চালায়, এক কথায় তারা তাৎক্ষণিক আমাদের সব কর্মীকে অফিস থেকে বের করে দেয়। আমাদের থেকে অফিসের চাবি নিয়ে নেয়া হয় এবং অফিস অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় র‌্যাব। এরপর আপনারা জানেন, আমাদের অফিসে লুটপাট হয়েছে। এতে করে অনেক পণ্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও দলিল-দস্তাবেজও হারিয়ে গেছে। আমরা মোট পাঁচটি গেটওয়ে দিয়ে টাকা লেনদেন করতাম। সার্ভার খুলে দিলে আমরা টাকা-পয়সার সঠিক তথ্যগুলো দিতে পারবো।

পাওনাদার গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যাপারে শামীমা বলেন, আমাদের এক বছর ব্যবসা করতে দিলে প্রথম বিনিয়োগ থেকেই সব গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হবে। এ মুহূর্তে আমাদের বিনিয়োগ দরকার। আমরা এমন কোনো বিনিয়োগ চাই না যাতে করে বিদেশি কোম্পানি সব লভ্যাংশ নিয়ে যায়। আমরা সবসময়েই চেয়েছিলাম, দেশের টাকা দেশে থাকুক। আমরা চেয়েছিলাম জ্যাক মা এর মতো এ দেশেও একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সঠিক সময়ে বিনিয়োগ উত্তোলন না করা।

শামীমা বলেন, আগের অর্ডার করা পণ্য ও রিফান্ডের অর্থ ফেরত দেব। এজন্য আমাদের প্রথমে সার্ভার খোলা জরুরি। সার্ভারের আইডি ও কোড একটি জটিল নম্বর। এটি মনে রাখা বা মুখস্ত করে রাখার বিষয় নয়। এ আইডিটি হারিয়ে যাওয়ায় এখন জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, রাসেলের জামিন না হলে সার্ভার ওপেন করা সম্ভব হবে না। মূলত রাসেলের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা চেক ডিজওনার মামলা। এটি দেড় কোটি টাকার একটি মামলা। আমরা রাসেলের জামিনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সামনের বছরের জুনে রাসেলের জামিনের আবেদন করবো। ইভ্যালির বিরুদ্ধে যে ভোক্তা অধিকার মামলাগুলো হয়েছে সে ব্যাপারে শামীমা বলেন, আমরা হাইকোর্ট ও বোর্ডের পরামর্শে কাজ করছি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আমাদের একটি বোর্ড মিটিং হবে। তখন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবো।

সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির ক্রেতা ও বিক্রেতারা ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহম্মদ রাসেলের মুক্তি দাবি করেন। তারা বলেন, রাসেলকে মুক্তি দিলে টাকা ফেরত পাওয়া সহজ হবে।

ইভ্যালির একজন মার্চেন্ট নাসিরউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইভ্যালিকে নতুন করে সুযোগ দেয়া উচিত। নতুন করে ব্যবসার সুযোগ দিলে ইভ্যালি ঘুরে দাঁড়াবে। অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে। ইভ্যালিকে সুযোগ দিলে এটিও বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারবে।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ