ডলারের দর নিয়ে লুকোচুরি কমছেই না। দিন যত যায়, ততই বাড়ছে। ক’দিন আগে রেমিট্যান্স ও রফতানিতে ডলারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেখানে থেকে রেমিট্যান্সে আরও এক টাকা দর কমল। অর্থাৎ রেমিট্যান্স আনতে প্রতি ডলারের জন্য সর্বোচ্চ দর নিধারণ করেছিল ১০৮ টাকা। এখন থেকে ১০৭ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমদানি কমায় এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম।
তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে আমরা বাফেদার বৈঠক করব। ওই বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টাকা-ডলারের বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। আমরা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের দর ১০৮ থেকে ১০৭ টাকায় নামিয়ে আনব। তবে রফতানির ক্ষেত্রে ৯৯ টাকাই রাখব।’
বাজারে ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা গত ১১ সেপ্টেম্বর এক সভায় ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেন। তাতে রফতানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা, প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে।
গত সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা। আর সর্বনিম্ন দর ছিল ৯৯ টাকা ৬৫ পয়সা। ব্যবধান ছিল ৮ টাকা ৩৫ পয়সা। গত মঙ্গলবার ডলারের সর্বোচ্চ দর ৫ টাকা ৪৪ পয়সা কমে ১০২ টাকা ৫৬ পয়সায় নেমে আসে। আর সর্বনিম্ন দর ২ টাকা ১৩ পয়সা বেড়ে ১০১ টাকা ৭৮ পয়সা হয়েছিল। ব্যবধান নেমে এসেছিল মাত্র ৭৮ পয়সায়। গত বুধবার ডলারের সর্বোচ্চ দর ফের বেড়ে ১০৭ টাকা ৬৫ পয়সায় উঠেছে। সর্বনিম্ন দর ছিল ১০০ টাকা। ব্যবধান বেড়ে ৭ টাকা ৬৫ পয়সা হয়েছে।
এদিকে টাকা নিয়ে আশারবাণী শুনিয়েছেন, বাফেদার চেয়ারম্যান আফজাল করিম। তিনি বলেন, ‘ডলারের বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমদানি বেশ কমেছে; রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এখন ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হবে। আর এটা অব্যাহত থাকবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’
এদিকে সংকট নিরসনে ডলারের দামের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়ে দাম বাজারভিত্তিক করে দেয়া হয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও স্বাভাবিক হচ্ছিল না ডলারের বাজার; উল্টো আগের মতোই চড়ছিল। দুর্বল হচ্ছিল টাকা। শক্তিশালী হয়েই চলছিল ডলার। তবে মঙ্গলবার থেকে স্বস্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বুধবার ফের হোঁচট খেয়েছে।
ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোর দামকে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই দরকেই আন্তঃব্যাংক লেনদেন দর বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। আগের দিনের লেনদেনের দরকে পরের দিন সকালে প্রকাশ করা হয়। এটাকেই বাজারভিত্তিক দর বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ১৩ সেপ্টেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে খুব একটা ডলার বিক্রি করছে না। জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারি কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য রিজার্ভ থেকে সামান্য কিছু ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।
সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বুধবারের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা ৬৫ পয়সা। আর সর্বনিম্ন দর ছিল ১০১ টাকা। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবারের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০২ টাকা ৫৬ পয়সা; সর্বনিম্ন দর ছিল ১০১ টাকা ৭৮ পয়সা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত সোমবারের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা; সর্বনিম্ন দর ছিল ৯৯ টাকা ৬৫ পয়সা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই দর ছিল যথাক্রমে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা ও ১০১ টাকা ৫০ পয়সা।
তার আগে প্রায় দেড় মাস আন্তঃব্যাংকে ডলারের ক্রয়-বিক্রয়মূল্য ৯৫ টাকায় আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারভিত্তিক করার আগের দিন অবশ্য ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমিয়ে ৯৬ টাকা করা হয়েছিল।
কয়েক দিন ধরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেট এবং ব্যাংকগুলোতে একই দামে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেটে ১১৪ টাকা ২০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১০৬ টাকা ২৫ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায়। অগ্রণী ব্যাংক থেকে কিনতে লেগেছে ১০৭ টাকা। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক গতকাল ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়।
বাফেদার চেয়ারম্যান আফজাল করিম বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ব্যাংকে নগদ ডলারের দামও কমে আসবে।’ ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়ানোই যেখানে বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছিল এতদিন, সেখানে ১৩ সেপ্টেম্বর এক দিনে ১০ টাকা ১৫ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের বাজার বাজারভিত্তিক করা হয়।
ওইদিন বৈদেশিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত এই মুদ্রাটির বিনিময় হার ঠিক করে দেয়া হয় ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। আগের দিন দাম এক টাকা বেড়ে হয়েছিল ৯৬ টাকা। অর্থাৎ এক দিনে বাড়ে ১০ টাকা ১৫ পয়সা বা ১০.৫৭ শতাংশ। ওই সিদ্ধান্তে ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ